বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৫ অপরাহ্ন

দিনাজপুরে ছেলের মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভ্যানচালক বাবা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১
  • ৩৯৮ বার পঠিত

দিনাজপুর সংবাদদাতা : অভাব-অনটনের মধ্যেও চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে অদম্য মেধাবী নিক্কন রায়ের। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে চান্স পাওয়ায় এখন নতুন করে দেখা দিয়েছে ভর্তি হওয়ার দুশ্চিন্তা। বাবা ভ্যানচালক, মা দিনমুজুর। পরিবারে অভাব অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী। দুই ভাইসহ পরিবারের সদস্য ৪ জন। বাবার একার পক্ষে এ সংসার চালানোই দুরহ হয়ে উঠেছে। তাই নিক্কন রায়ের মেডিকেলে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবার।

দিনাজপুর সদর উপজেলার ২ নং সুন্দরবন ইউনিয়নের সুন্দরবন গ্রামের হতদরিদ্র ভ্যানচালক খনিজ চন্দ্র রায়ের ছেলে নিক্কন রায়। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে প্রাইভেট পড়ানো আর মানুষের অনুদানের টাকায় দু-এক মাস মেডিকেলে ভর্তি কোচিং করেন। দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজে মেডিকেল পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল। স্বপ্ন বুকে নিয়েই মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। ফলাফল প্রকাশের পর জানতে পারেন চান্স পেয়েছে রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে। কিন্তু সেই সুখানুভূতি হারিয়ে তার, চোখেমুখে ফুটে ওঠে দুশ্চিন্তার ছাপ। কারণ ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান হলেও দারিদ্র্যতার বাধা অতিক্রম করে মেডিকেলে ভর্তি হওয়াটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে তার।

নিক্কন রায়ের বাবার প্রতিদিন আয় ২০০-৩০০ টাকা। এ আয়ে পরিবারে কোনোরকমে চলে। খনিজ চন্দ্র রায় বলেন, ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে এতে আমি খুশি। কিন্তু আর্থিক অনটনের সংসার আমার। অনেক কষ্টে ছেলেকে এতদূর এনেছি। মেডিকেলে ভর্তি করাসহ পড়াশোনার ব্যয় বহনের মতো অবস্থা আমার নেই। কিভাবে ছেলের ভর্তির টাকার জোগান হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আমি।

নিক্কনের মা মমতা রানী রায় বলেন, আমাদের কোনো জমিজমা নেই। শুধু ভিটেমাটি আছে। স্বামী ভ্যান চালিয়ে যা আয় করেন, তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলে। এখন নিক্কনের মেডিকেলে ভর্তি ও ডাক্তারি পড়ার টাকা কোথা থেকে আসবে তা ভেবে পাচ্ছি না আমরা। সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা ছাড়া অদম্য মেধাবী নিক্কন ডাক্তারি ভর্তি অসম্ভব বলে জানান তিনি।

নিক্কন রায় বলেন, ইশ্বর আমাকে মেধা দিয়েছে। কিন্তু বাবা মাকে অর্থ দেয়নি। তৃতীয় শ্রেণি থেকেই আমি অদম্য একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে স্কুল-কলেজে প্রথম স্থান অধিকার করে আসছি। অভাব অনটনের মধ্যেও ভ্যান চালিয়ে বাবা আমাকে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া পর্যন্ত অর্থ দিয়েছে। মেডিকের মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছি। কিন্তু এখন দেখি খরচের বহর। এত টাকা খরচ করে আমাকে মেডিকেল কলেজে পড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু আমার খুব ইচ্ছা একজন চিকিৎসক হয়ে আমি এ দেশের অসহায়, গরীব ও দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা সেবা করবো। কিন্তু সে আশা হয়তো বা আশায় থেকে যাবে। তাই ইশ্বরের কাছে আমার আকুল আবেদন মেধা দিলে অর্থ দিও। অর্থ না দিলে মেধা দিও না। আমার স্বপ্ন পূরণে তোমার কাছে (ইশ্বর) প্রার্থনা, আমি যেন অসহায় দুখি মানুষের চিকিৎসক হিসেবে পাশে দাঁড়াতে পারি।

নিক্কন ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়েছিল। সদরের সুন্দরবন ইউনিয়নের আত্রাই স্কুলে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ও ২০২০ এইচএসসি দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী বলেন, দিনাজপুর জেলায় যেসকল মেধাবী ছাত্রছাত্রী মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়েছে, তাদের সরকারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন ভর্তির অর্থ ও বই ক্রয়ের অর্থ দেয়া হবে। কোনোভাবেই যেন তাদের স্বপ্ন নষ্ট না হয়। যেসকল দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, তারা আমাদের দেশের অমূল্য সম্পদ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com