নিজস্ব সংবাদদাতা : কথায় আছে অসৎ উদ্দেশ্যে করা কোনো কাজের ফল পাওয়া যায় না। উল্টো হিতে বিপরীত হয়। যেমনটা হয়েছে আলোচিত মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যার বিচার চাওয়ার নামে কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা করতে গিয়ে। যদিও মুনিয়া খুন হয়েছে নাকি আত্মহত্যা সে বিষয়টিই এখনো ফয়সালা হয়নি।
ঘটনার সূত্রপাত হয়, বুধবার (২৬ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে মুনিয়া হত্যার বিচারের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে। যে কোনো অপরাধ বা অন্যায়ের বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
কিন্তু প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসলো যখন সংবাদ সম্মেলন শেষ হলো। জানা গেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নামে একটি সংগঠন বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে এমন আয়োজনে অংশ নেয়। যার পিছনের কারিগর হত্যা মামলার আসামি জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন।
বিষয়টি আরো পরিষ্কার হলো যখন দেখা গেল সংবাদ সম্মেলন শেষে টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে প্রকাশ্যে তর্কাতর্কি।
অনুষ্ঠান শেষে প্রেসক্লাবে পেছনের গেটে কয়েকজন জড়ো হয়ে সংগঠনের এক নেতার কাছে টাকার ভাগ দাবি করলে- জবাবে তিনি বলেন- আমি যা পেয়েছি তা আপানাদের ভাগ করে দিয়েছে। আমাকে কি আপনারা বিশ্বাস করেন না। তখন পেছনে থাকা এক নারী বলে উঠেন কিভাবে বিশ্বাস করি। যা কথা হয়েছিল তা তো পাইনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনের এক সদস্য বলেন, আমাদের এখানে আনার আগে বলা হয়েছিল মাথাপিছু ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলন শেষে টাকা পেয়েছি মাত্র ৫০০টাকা। শুনেছি শারুণ সাহেব লাখ লাখ টাকা খরচ করেছে আজকের সংবাদ সম্মেলনকে ঘিরে। অন্যায়ের বিচার চাইতে গিয়ে আমরাই বড় অন্যায়রে স্বীকার।
আরো জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া অধিকাংশই ছিল বহিরাগত। এমনকি রাজাকারদের সন্তান ও জামায়াত-শিবির সদস্য নিয়ে এমন সংগঠন গড়েছেন। শারুনের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ পেয়ে এমন অনুষ্ঠান আয়োজন করেন তিনি। শুধু তাই নয় সংবাদ সম্মেলনে অধিকাংশ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি। বরং প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন। প্রকৃত অর্থে টাকার লোভে এমন আয়োজন করেছেন বলে তার সহযোগীরা জানিয়েছেন।
এদিকে বোন হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেই বড় বিপদে আছেন মুনিয়ার বড় ভাই সবুজ। বাদী হয়ে মামলা করার পর থেকে অনবরত হুমকি মুখে রয়েছেন তিনি। স্থায়ী নিবাস কুমিল্লার নিজ বাড়িতে থাকতে পারছেন না হামলার ভয়ে। কারণ আসামি শারুনের পক্ষ থেকে তাকে মামলা তুলে নিতে নানা হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন অনবরত।
এ বিষয়ে আশিকুর রহমান সবুজ বলেন, ‘আমরা তিন ভাইবোনের মধ্যে মুনিয়া তৃতীয়। তার বয়স ২১ বছর। সে মাধ্যমিক শেষ করে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে পড়াশোনার জন্য যথাসাধ্য সহযোগিতা করে আসছিলাম। ইতিমধ্যে আসামি নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের সঙ্গে আমার বোনের পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে মাঝেমধ্যে আসামি শারুনের সঙ্গে কথাবার্তা ও দেখা-সাক্ষাৎ হতো মুনিয়ার। আমার বোনকে হত্যার আগে তার কাছ থেকেই আমি এসব কথা জেনেছি ও শুনেছি।’ তিনি বলেন, ’কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, গত দুই বছর আগে আমার বোন নুসরাত জাহান (তানিয়া) ও তার স্বামী মিজানুর রহমানের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে গুলশানে ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাড়িতে ফ্ল্যাট ভাড়া করে। সেখানে আমার ছোট বোন নুসরাত মুনিয়াকে ওই বাসায় অবস্থানের নির্দেশ দেয়। তাদের নির্দেশে মুনিয়া সেখানে থাকা শুরু করে। সেই বাসা থেকেই তার লাশ উদ্ধার করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ’আমার বোন আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে খুন করা হয়েছে। যে কারণে আমি মামলা দায়ের করি। মামলা দায়ের করার পর থেকেই আসামি পক্ষ ক্রমাগত হুমকি দিয়ে আসছে। হুমকির মুখে নিজের ঘরে থাকতে পারছি না। ভয় আমাকে তাড়া করছে। বোনের বিচার চাওয়া কি আমার অপরাধ। আমি বোন হত্যার বিচার চাই। আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
অভিযোগে করে মুনিয়ার ভাই সবুজ বলেন, ‘মুনিয়ার অবাধ চলাফেরা শুরু থেকেই আমি অপছন্দ করতাম। এমনকি মুনিয়ার মৃত্যুর খবরও শুরুতে দেওয়া হয়নি। ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিটে আমাকে জানানো হয় মুনিয়া আত্মহত্যা করেছে। মুনিয়ার বিষয়ে নুসরাত ও তার স্বামী অনেক তথ্যই গোপন করে আমার কাছে।