মাদারীপুর সংবাদদাতা : পদ্মায় চলাচল করা বেশির ভাগ স্পিডবোটের চালক অদক্ষ যার কারণে প্রায় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় যাত্রীদের। অদক্ষ স্পিডবোট চালকদের অনেকের বয়স ১২-২০ বছরের মধ্যে। কেউ আবার নেশাগ্রস্ত। সর্বশেষ সোমবার সকালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ২৬ জন প্রাণ হারায়।
বাংলাবাজার ঘাট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা এনসান মাদবর জানান, ‘আমার ধারণা স্পিডবোট চালক শাহ আলম রাতজাগনা ছিল আর মাথা নিচু করে চালাচ্ছিল স্পিডবোটটি। অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন হাওয়ার কারণে নোঙর করা বাল্কহেডের সামনে এসে গতিরোধ করতে পারেনি। শিমুলিয়া ফেরি ঘাটের যাত্রীবাহী ফেরি থেকেও শুনেছি কিছু যাত্রী তুলেছে। ভোর ৬টার দিকেও শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় দেখা গেছে তাকে। তার কিছুক্ষণ পর মোট ৩১ যাত্রী নিয়ে রওনা দেয় সে’।
ওই দিন সকাল ৭টা বাজার কিছুক্ষণ আগে পুরাতন কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায় আসার পর নোঙর করা বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এত ঘটনাস্থলেই ২৫ জন মারা যান। পরে আরো একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
শিবচর উপজেলার নিয়ামতকান্দী গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল মোল্লা বলেন, ‘আমার ছোট ভাই শাহাদাত মোল্লা বাল্কহেড-স্পিডবোট দুর্ঘটনায় মারা গেছে। সে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিল। আমি মনে করি স্পিডবোট চালক অদক্ষ ও নেশাগ্রস্ত ছিল। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্পিডবোট চালক বলেন, ‘আমি ২০১২ সাল থেকে স্পিডবোট চালাই। আমি প্রথম যখন স্পিডবোট চালাতাম তখন স্পিডবোটের হর্স পাওয়ার ছিল ৪০। তবে এ ধরনের স্পিডবোট চালানোর জন্য খুব দক্ষ চালক প্রয়োজন’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক স্পিডবোট চালক জানান, ‘সঠিকভাবে এসব স্পিডবোট চালাতে হলে তাকে শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে ফিট থাকতে হবে। তাই মালিকপক্ষের উচিত দক্ষ চালক বাছাই করে তাদের দিয়ে এসব স্পিডবোট চালানো। তা না হলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে’।
নৌ পুলিশে ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি যাতে এই লকডাউনের মধ্যে কোনো স্পিডবোট না চালানো হয়। কিন্তু আমরা শুনেছি এরা নাকি ঘাট থেকে দূরে এক স্থানে যাত্রী নামিয়ে আবার যাত্রী তুলে চলে যায়। চালক অদক্ষ বা দক্ষ এ বিষয়টি তো আমাদের না, এটা স্পিডবোট মালিকরা ঠিক করবে তারা কাদের দিয়ে স্পিডবোট চালাবে। তবে উচিত দক্ষ ও প্রাপ্তবয়স্ক চালক দিয়ে স্পিডবোট চালান।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, আমরা তদন্ত কমিটি করেছি প্রতিবেদন হাতে আসলে আমার চেষ্টা করব নিয়মবহির্ভূত কোনো কাজ যেন শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে না ঘটে।
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে সোমবার সকাল পৌনে ৭টায় ৩১ যাত্রী নিয়ে স্পিডবোটটি ছেড়ে আসে। এ সময় মাদারীপুর কাঁঠালবাড়ী বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে থেমে থাকা বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডে ধাক্কা দিয়ে ডুবে যায় স্পিডবোটটি। এতে সব যাত্রী পানিতে পড়ে যায়। পরে নদী থেকে একে একে ২৪ লাশ উদ্ধার করা হয়। ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে আরো একজনের মৃত্যু হয়। এতে তিন শিশু ও দুই নারীসহ ২৬ জনের মৃত্যু হয়।
স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এ উদ্ধার কাজ পরিচালনা করেন।
অন্যদিকে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন স্থানীয় সরকার উপপরিচালকে মো. আজাহারুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। তাদের তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।