অনলাইন নিউজ : কেউ এক্সিকিউটিভ, কেউ পিএসডি কেউ বা ডায়মন্ড। এটা ডেসটিনি যুগের কথা। এমন সব চটকদার বাক্যে সহজ-সরল মানুষদের আকৃষ্ট করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল কয়েক হাজার কোটি টাকা। সাধারণ মানুষের সেই টাকায় নিজেদের নামে অঢেল জমিসহ নানা সম্পদ গড়েছিল মালিক-কর্তৃপক্ষ। ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড বা ডেসটিনি গ্রুপ নামে পরিচিত সেই মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানির নামে থাকা সম্পদগুলো এখন কোথায়? কে বা কারা সেগুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে? আদৌ কি সঠিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে, নাকি সাধারণ মানুষদের বিনিয়োগকৃত এই সম্পদ ব্যক্তিবিশেষের পেটে যাচ্ছে? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আদালতের নির্দেশে দীর্ঘদিন ধরে ডেসটিনির সম্পদের রিসিভার বা তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। এর মধ্যে রাজধানীতে থাকা ডেসটিনির সম্পদ ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং রাজধানীর বাইরের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) বা সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষকে পথে বসানো সেই ডেসটিনির অধিকাংশ অর্থসম্পদ এখন পড়ে আছে অলস ও অব্যবস্থাপনায়। ডেসটিনির হাতে গোনা দু-চারটি ছাড়া অধিকাংশ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। অনেক জায়গা-জমিতে মালিকানা তথা দখলদারিত্ব নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। মূল মালিক ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিরা জেলে থাকায় ঢাকার বাইরের অনেক জমি বেদখল হয়ে গেছে। ডেসটিনির বেশিরভাগ যানবাহন পড়ে থেকে ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে মাটিতে।
এ ছাড়া সচল প্রতিষ্ঠান বা ভবনগুলোও চলছে ঢিমেতালে। তবে তুলনামূলক ঢাকার বাইরের যেসব এলাকায় ডেসটিনির জমি বা সম্পদ রয়েছে, সেগুলোতেই নানা প্রভাবশালীর চোখ পড়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। অনেক এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখলের পাঁয়তারা করছেন। বান্দরবানের রাবার বাগান ও গাজীপুরের টঙ্গীতে খামার প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থানে ডেসটিনির এ ধরনের সম্পদের কথা জানা গেছে। যেন কার সম্পদ কে খায় এমন এক অবস্থা বিরাজ করছে ডেসটিনির অনেক সম্পদের ক্ষেত্রে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টায় রাজধানীর ফার্মগেট মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ফার্মগেটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ পয়েন্টে তিনতলা ভবনটি ডেসটিনির মালিকানাধীন। সেখানে রয়েছে আনন্দ সিনেমা ও ছন্দ সিনেমা নামে দুটি প্রেক্ষাগৃহ। এটি আনন্দ ভবন নামেও পরিচিত। আনন্দ সিনেমা হলের ভেতরে প্রবেশ করলে এগিয়ে আসেন গেটম্যান ও ক্লিনারের দায়িত্বে থাকা পঞ্চাশোর্ধ্ব মুনসুর রহমান। তখন ‘সান’ নামে একটি বাংলা মুভি চলছে জানিয়ে মুনসুর বলেন, ‘আমরা কোনোমতে হল চালিয়ে জীবন চালিয়ে নিচ্ছি। পুলিশের এক কর্মকর্তা (তেজগাঁও থানার এসআই বিনয় কুমার হালদার) এ হলের দেখভাল করেন। তবে এখন নেই। হলও ঠিকমতো চলে না। মানুষের হলের সিনেমার প্রতি আগ্রহ নেই। ৫ হাজার ৩৫০ টাকা মাসিক বেতন আর কিছুটা টিকেট বিক্রির টাকায় কোনোমতে সংসার চালাচ্ছি।’
বাইরে গিয়ে হলের কোরিডোরে কথা হয় বুকিং মাস্টার রমজান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আনন্দ ও ছন্দ সিনেমা হল মিলে আগে প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিল। বর্তমানে আছে ১৮ জন। হল সেভাবে চলে না। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে মাসিক বেতন নিয়মিত দেওয়া হয়।’ রমজান জানান, ডেসটিনির মালিকানা থাকাকালে বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাবদ প্রায় ১২ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এমনকি অনেক কর্মচারীর দীর্ঘদিনের বেতনও বন্ধ আছে ডেসটিনির সময়কালের।
সিনেমা হলের আয়ের টাকাগুলো কোথায় যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে সেখানকার কর্মীরা বলেন, টিকেট বিক্রিসহ যাবতীয় আয়ের টাকা পুলিশ নিয়ে যায়। অবশ্য কর্মচারীদের বেতনসহ বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য খরচ পুলিশই করে থাকে। তবে আয়-ব্যয় শতভাগ রসিদ বা কাগজপত্র অনুসারে হয় কি না, সে সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেননি কর্মীরা।
যোগাযোগ করা হলে আনন্দ ও ছন্দ সিনেমা হলের দেখভালের দায়িত্বে থাকা তেজগাঁও থানার এসআই বিনয় কুমার হালদার বলেন, সিনেমা হল পরিচালনা ও আয়-ব্যয় যথাযথ নিয়মানুসারে সম্পন্ন করা হয়। আমরা কেবল এটার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করি। তবে বার্ষিক আয়-ব্যয় কত সে সম্পর্কে তিনি স্পষ্টভাবে কিছু না বলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার ফারুক হোসেনের সরকারি মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে গেলে ফারুক হোসেনের কক্ষটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ সময় মিডিয়া সেন্টারের এডিসি হাফিজ আল আসাদের কক্ষে গিয়ে ডেসটিনির বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি কোনো তথ্য জানাতে পারেননি।
অবশ্য শেষ পর্যন্ত কথা হয় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটাতে আমরা কোনো পক্ষ না। আদালত দুদকের মামলায় জব্দ করতে বলেছে বলে এটার রিসিভার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমরা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দেখভাল করছি। যেখানে যে খরচ করতে হচ্ছে সেখানকার ভাড়া তুলে সেখানে খরচ করছি। এর বাইরে আমাদের কোনো কাজ নেই। আমরা এই মামলার কোনো পক্ষও না প্রতিক্ষপও না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই দুটি সিনেমা হল ছাড়াও রাজধানীতে ডেসটিনির বেশ কিছু ভবন, ফ্লোর, ফ্ল্যাট, জমি ও যানবাহন রয়েছে। সেগুলো ডিএমপির তত্ত্বাবধানে দেখভাল করে রাখা হয়। এমনই একটি সম্পদ রয়েছে রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন ডুমনি রোডের লেকসিটি কনকর্ডে। যেখানে প্রায় নয়টি ফ্ল্যাট ডেসটিনির। গত শনিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটগুলোতে তালা দেওয়া। লেকসিটি কনকর্ডের রূপালী ভবনের ষষ্ঠ তলায় ৬/বি৩ নম্বর ফ্ল্যাটের দরজায় লেখা ‘বিজ্ঞ মহানগর দায়রা জজ আদালত ও সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত, ঢাকা এর আদেশক্রমে এই সম্পত্তি রিসিভার/তত্ত্বাবধায়ক পুলিশ কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা।’ ওই ভবনেরই চতুর্থ তলার ৪/বি১ নম্বর ফ্ল্যাটেও একইভাবে নোটিস ঝোলানো।
রাজধানীর খিলক্ষেত থানার ওসি জানান, তার থানার দায়িত্বে রয়েছে লেকসিটি কনকর্ডে ডেসটিনির একটি ফ্ল্যাট। তবে এটি থেকে কোনো আয় হচ্ছে না। বাকি ফ্ল্যাটগুলো ভাটারা থানার আওতায় রয়েছে।
গুলশান বিভাগের পুলিশ সূত্র জানায়, বাড্ডা ও ভাটারা এলাকায় ডেসটিনির মোট ৬টি সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্লটের আগের মালিক দখলে রেখেছেন। তার মধ্যে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দুটি প্লটের দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ। এ দুটিই বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। শনিবার সরেজমিন সেখানে আনসার সদস্যদের মোতায়েন থাকতে দেখা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শিল্প এলাকা গাজীপুরের টঙ্গীতে ন্যাশনাল টিউব রোডে প্রায় ২৯ বিঘা জমি ক্রয় করা হয় ডেসটিনি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নামে। ২০০৫ সালে জমিটি কেনা হয় বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও কর্নেল (অব.) শহিদুল্লাহর কাছ থেকে। ২০০৮ সালে জমিটির ওপর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল করার জন্য ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়। ২০১২ সালে সব প্রক্রিয়া শেষে জমিটির ওপর হাসপাতাল নির্মাণের কার্যক্রমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু ওই বছরই অর্থ পাচার মামলা হয় ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন ও প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন অর রশিদসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে। এরপরই টঙ্গীর জমিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। বর্তমানে ওই জমির ওপর একটি বিশাল স্থাপনা ভুতুড়ে অবস্থায় পড়ে আছে। অপর একটি সূত্র জানায়, এই জমির প্রকৃত মালিক কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানি। কোহিনূর কেমিক্যাল থেকেই জমিটি বায়না সূত্রে মালিক হয় ডেসটিনি। ওই সময় জমিটি ডেসটিনি সাব-কবলা করেনি। এই বিষয়ে গাজীপুর আদালতে একটি মামলাও চলছে।
নূর মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি একটি ওয়্যার হাউজের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে রয়েছেন। তিনি ওই জমির ওপর স্থাপনায় দ্বিতীয় তলায় থাকেন। তাদের সেখানে একটি অফিসও রয়েছে। সেখানে যেতে চাইলে নূর মোহাম্মদ বলেন, অনুমতি ছাড়া যাওয়া যাবে না। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা কীভাবে প্রতিষ্ঠান চালান, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ওই কর্মকর্তাদের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর চাইলে তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানান। আরেকটি সূত্র জানায়, প্রায় ২৯ বিঘা জমিটি স্থানীয় প্রভাবশালীসহ কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দখলে নিতে চাইছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জমিটির চতুর্দিকে বাউন্ডারি। প্রবেশ গেট দুটি। একটি গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে স্থাপনার বিশাল বারান্দায় সারিবদ্ধ করে রাখা চারটি পিকআপ ভ্যান। সবগুলোরই মরীচিকা পড়েছে। এ ছাড়া ওই জমিতে ১৫টি গরু চরাতে দেখা যায়। গরুগুলোর মালিক স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা দ্বীন মোহাম্মদ নিরব। এই জমিতে এক সময় ছিল সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন চান্দা ব্যাটারির কারখানা। ওই কারখানায় নিরবের বাবা চাকরি করতেন। ওই সূত্রেই নিরব জমিতে গরুর খামার তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে।
ডেসটিনির যত সম্পদ : দুদক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের ২২টি জেলায় ডেসটিনির সম্পদ রয়েছে। এ সম্পদ দুই ভাগে বিভক্ত, প্রতিষ্ঠানের নামে ও পরিচালকদের নামে। তবে গ্রুপভুক্ত ৩৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডেসটিনি ২০০০, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশনের নামেই বেশি সম্পদ। রাজধানীর বাইরে মুন্সীগঞ্জ জেলায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি সম্পদ। জেলার সিরাজদীখানেই রয়েছে এক হাজার ৩০০ কাঠা জমি। ডেসটিনির সম্পদ কেনা হয় মূলত ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি, ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন এবং ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রফিকুল আমীন, ডেসটিনি ২০০০-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনসহ পরিচালকদের নামে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক যুগ ধরে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পাঁচ হাজার কোটির বেশি টাকা সংগ্রহ করে ডেসটিনি। এই টাকা দিয়ে ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিরা কথিত প্রতিষ্ঠান ও নিজেদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ কিনেছেন। বাড়ি, গাড়ি, সিনেমা হল ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে পাটকল, হিমাগার, টেলিভিশন চ্যানেল, বিপুল পরিমাণ ধানি জমি ও শপিং কমপ্লেক্স করার জমি।
এদিকে, ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী রাজধানীতে ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনেরই ২৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে লেকসিটি কনকর্ডে তার নামে রয়েছে নয়টি ফ্ল্যাট। মগবাজারে একটি, ধানমন্ডিতে দুটি এবং খিলক্ষেতে রয়েছে একটি ফ্ল্যাট। পুরান ঢাকার ২৫ নম্বর কোর্ট হাউস স্ট্রিট ভবনে আট কাঠার প্লট এবং ধানমন্ডিতে দুই হাজার ৬৩৩ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে তার স্ত্রী ফারাহ দীবার নামে। ঢাকার কল্যাণপুরের দারুসসালাম ও পুরানা পল্টন লাইনের স্থাপনাবিহীন বাড়ি এবং বাংলামোটরে একটি ভবনের দশম তলায় রয়েছে পাঁচ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্লোর। এদিকে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনের নামে সিদ্ধেশ^রী, খিলগাঁও, গেণ্ডারিয়া, ক্যান্টনমেন্ট ও ভাটারায় প্লট-ফ্ল্যাট রয়েছে। বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে রয়েছে ২৪টি রাবার বাগান। খুলনায় সাত একর জমি, ছয় বিভাগীয় শহরে ডেসটিনি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেন্টার নির্মাণের জমি, কক্সবাজারে জমিসহ নির্মীয়মাণ হোটেল ও গাজীপুরে ডেসটিনি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ স্থাপনের জন্য জমি রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডেসটিনির মালিকানাধীন রাজশাহীর বর্ণালী সিনেমা হলটি বন্ধ। সিনেমা হলের মাঠে মাঝেমধ্যে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ থেকেও অবশ্য কিছু আয় হয়। অন্যদিকে বান্দরবানের লামা থানায় রয়েছে ডেসটিনির সবচেয়ে বেশি রাবার বাগান। এগুলো পুরোপুরিভাবে অরক্ষিত। যাদের কাছ থেকে এ বাগানগুলো কেনা হয়েছিল, তারাই এখন এগুলো দখলে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ডেসটিনি গ্রুপের কোম্পানি সচিব মিজানুর রহমান বলেন, বন বিভাগকে এ বাগানগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে ডেসটিনির পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল। বন বিভাগ এতে রাজি হয়নি।
সম্পদের সুরাহার উদ্যোগ নেই : সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে দুদকের মামলাসহ যেসব অভিযোগে ডেসটিনির সম্পদ আদালতের নির্দেশে জব্দ অবস্থায় রয়েছে সেগুলো আদৌ কবে নাগাদ গ্রাহকরা পাবেন তা বলতে পারেননি কেউ। এর মধ্যে অনেক সম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে বা যাচ্ছে। অনেক সম্পদ বেদখল বা নানাজনের মালিকানা জটিলতায় মামলার মাঝে পড়েছে। ফলে সম্পদের জটিলতার সুরাহা কোন পথে সেটি নিয়ে এখন মূল আলোচনা হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
এ সম্পর্কে দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ডেসটিনির বিরুদ্ধে দুদকের দুটি মামলার মধ্যে গত ১২ মে একটির রায় হয়েছে। এতে ডেসটিনির চেয়ারম্যান ও এমডিসহ অনেকেরই বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। অপরদিকে ট্রি প্ল্যান্টেশনের মামলা বিচারাধীন আছে, যা বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। যেটির রায় হয়েছে সেখানে আদালত কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। কমিটি গঠন করতে বলেছেন। তাই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পেলেই এ বিষয়ে বাকি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, আদালতের রায়ে কী বলা হচ্ছে সেটা আগে দেখে নিতে হবে। এ ছাড়া সরকার চাইলে ডেসটিনির সম্পত্তি বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফিরিয়ে দিতে পারে। সেজন্য ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের কোম্পানি আইনে কোম্পানি কোর্টে মামলা করতে হবে।
গত ১২ মে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনসহ ৪৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি তাদের মোট ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠানের যত সম্পত্তি ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছিল, তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..