আলিফ হোসেন,তানোর : রাজশাহীর তানোরের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে ধান কুড়ানোর আনন্দে মেতেছে গ্রামীণ শিশুরাঘ। চাষির কেটে নেওয়া ধানের গাছ থেকে ঝরে পড়া শীষ দেখেই কচি পায়ের দৌড়। কুড়িয়ে নিচ্ছে শিশুর দল। এ নিয়ে হচ্ছে প্রতিযোগিতাও। তারা ইঁদুরের গর্ত থেকেও ধান সংগ্রহ করছে। জড়ো করছে বাড়িতে। বাবার সঙ্গে বাজারে যাবে এক দিন। বেচবে। সেই টাকা দিয়ে হবে নতুন জামাকাপড়, ক্রিকেট ব্যাট। হবে পিকনিক। মায়াময় এই দৃশ্য দেখে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ছেন বড়রা। এই আনন্দে বাধা দিচ্ছেন না বাবা-মা। চাষিদের ধান কাটার উৎসবে শিশুরা যোগ দেওয়ায় তারাও খুশি। এই সংস্কৃতি অনেক পুরনো। এখানে ধানের পরিমাণ মুখ্য নয়, আনন্দটাই বড়। আধুনিক ও যান্ত্রিক জীবনে এই সংস্কৃতি প্রায় বিলুপ্ত, তবে করোনা গ্রামীণ জনপদের শিশুদের মাঝে সেই সংস্কৃতি ফিরিয়ে এনেছে। ৩০ নভেম্বর সোমবার উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির কচুয়া মাঠে দেখা যায় পাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে আদিবাসি শিশুরা এসেছে ধান কুড়াতে। চাষিরা ঘাড়ে করে ধানের বোঝা নিয়ে যাচ্ছে গৃহস্থের বাড়ি। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে এসেছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জমরেস টুডু (৭)। করোনা সংকটে স্কুল বন্ধ থাকায়। এখন বন্ধুদের সঙ্গে ধান কুড়ানোর আনন্দে আছে। এখানে ধানের পরিমাণ ব্যাপার নয়। আনন্দটাই অন্যরকম। ধান কুড়ানোর অনেক স্মৃতি আছে। শিশুদের দেখে এসব মনে পড়ছে। কচুয়া আদিবাসি পল্লীর বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জানান, ধান কুড়ানোর অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। জেলার প্রায় সব মানুষের জীবনেই ধান কুড়ানোর স্মৃতি মেখে আছে। ধান কুড়ানো মানেই অন্যরকম সুখ। শিশুদের ধান কুড়ানোর আনন্দ তাদের মনোজাগতিক বিকাশে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। করোনা সংকটের কারণে শহুরে শিশুরা যখন চার দেয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে পড়েছে, তখন গ্রামীণ শিশুরা এসব আনন্দে মেতে আছে। তারা প্রকৃতির সঙ্গ পাচ্ছে। এ আনন্দ তাদের দৈহিক গঠনেও কাজে লাগবে। তানোর উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, এই এলাকায় শিশুদের ধান কুড়ানো অনেক আগে থেকেই একটি প্রচলিত সংস্কৃতি। লেখাপড়ার চাপে শিশুদের আনন্দ উদযাপনের এই সংস্কৃতি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিন্ত্ত করোনা সংকটে স্কুল বন্ধের কারণে তারা আবার সেই আনন্দ উপভোগ করছে। শিশুদের মেধা বিকাশে এই আনন্দ বিরাট ভূমিকা রাখবে