বগুড়া সংবাদদাতা : ২২বছর পর বাড়ি ফিরলেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার নিখোঁজ আমেনা খাতুন। সোমবার তিনি একটি বিশেষ ফ্লাইটে নেপাল থেকে দেশে ফেরেন। এরপর সোমবার রাতে ধুনট উপজেলার ছোট চাপড়া গ্রামে পৌঁছে নেন জন্মভূমির স্পর্শ।
আমেনা বেগম ধুনট উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের মৃত আজগর আলীর স্ত্রী। তার বাবার বাড়ি পার্শ্ববর্তী চিকাশী ইউনিয়নের ছোট চাপড়া গ্রামে। তিন ছেলে ও এক মেয়ের জননী আমেনা।
পরিবারের সদস্যরা জানান, আমেনা বেগম মানসিক রোগে আক্রান্ত। যার কারণে তিনি অসংলগ্ন কথা বলেন। স্বামীর বাড়ি থেকে হারিয়ে যেতেন তিনি। এরপর ঠিকানা অনুসন্ধান করে ফিরতেন বাড়িতে। কিন্তু ২২ বছর আগে শেষবার যখন বেড়িয়ে যান আমেনা, এরপর তার সন্ধান পায়নি স্বজনরা।
আমেনা খাতুনের বড় ছেলে আমজাদ হোসেন বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মাকে পাওয়া যায়নি। আমরা ধারনা করেছিলাম, মা মারা গেছেন। আমাদের ভাই-বোনদের ভোটার আইডি কার্ডেও তার নামের সঙ্গে ‘মৃত’ উল্লেখ করা রয়েছে।
প্রায় তিনমাস আগে বাংলাদেশী একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে আমেনা খাতুনের সন্ধান পান তার স্বজনরা। এরপর নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় তার সাথে। মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন সন্তানরা। কিন্তু করোনার কারণে দেশে ফিরতে পারেনি আমেনা খাতুন।
আমেনা খাতুনকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশী দূতাবাস। দুই দেশের কুটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে সোমবার বিশেষ একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরেন আমেনা খাতুন। এরপর সোমবার মধ্যরাতে চিকাশী ইউনিয়নের ছোট চাপড়া গ্রামে বড় ছেলে আমজাদ হোসেনের বাড়িতে ওঠেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাকে দেখতে ভিড় জমায় প্রতিবেশীরা। আমেনা খাতুন ফিরে আসায় আনন্দে উদ্বেলিত স্বজনরা।
আমেনা খাতুনের নাতি আদিলুর রহমান আদিল বলেন, দাদি ফিরে আসায় আমরা সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া আদায় করেছি। পরিবারের সবাই আনন্দিত। এক প্রশ্নের জবাবে আদিল বলেন, নেপালের দূতাবাসের আন্তরিকতার কারণেই দাদিকে আনা সম্ভব হয়েছে। তার দেশে ফিরতে কোন অর্থ ব্যয় হয়নি।
৫৮ বছর বয়সে নিখোঁজ হোন আমেনা খাতুন। সকলের কাছে মৃত হলেও তিনি বেঁচে ছিলেন নেপালের সানসুরি জেলায়। কাজ করেছেন বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও বাসা বাড়িতে। ৮০ বছর বয়সের এই বৃদ্ধ নারী শারীরিক দুর্বলতার জন্য আর কাজ পাচ্ছিলেন না। স্থানীয় পৌর মেয়রের উদ্যোগে একটি সেভ হোমে আশ্রয় পান আমেনা খাতুন। ওই সেভ হোমে তার দেখা পান বাংলাদেশী দূতাবাসের কর্মকর্তারা। সেখানে দীর্ঘ সময় কথা বলার পর তারা আমেনা খাতুনের ঠিকানা জানতে সক্ষম হোন। এরপরই তার পরিবারের সন্ধান এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
দেশে ফিরেছেন আমেনা খাতুন। ছেলে-মেয়ে ও স্বজনদের পেয়ে আনন্দিত। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় সঠিক তথ্য দিতে পারছেন না তিনি। আর একারণেই আমেনা খাতুনের নেপাল যাবার রহস্য উম্মোচন হয়নি।