কুমিল্লা সংবাদদাতা : কুমিল্লার লালমাইয়ে স্ত্রীকে নির্যাতনের ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এই ঘটনায় নির্যাতনকারী স্বামী নাজমুল হাসানকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে লালমাই থানা পুলিশ। নিজ গ্রাম থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। এর আগে নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেন নির্যাতিতা স্ত্রী মরিয়ম আক্তার আইরিন। বুধবার স্বামী নাজমুল হাসানকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের বড় চলুন্ডা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আবুল খায়েরের ছেলে নাজমুল হাসান দু’বছর আগে একই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের গৈয়ারভাঙ্গা বাজারস্থ খলিল মেডিকেল হলে সেলসম্যান হিসেবে চাকরি করতেন। সেই সুযোগে ওষুধ ক্রয় করতে গিয়ে নাজমুলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রেমনল গ্রামের কৃষক মমতাজ উদ্দিনের মেয়ে মরিয়ম আক্তার আইরিনের (১৯)।
পরবর্তীতে পরিবারের সম্মতি না পাওয়ার অজুহাতে নাজমুল আইরিনকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। এরই মধ্যে গত বছরের ১১ অক্টোবর বিয়ের দাবিতে নাজমুলের বাড়িতে অনশন শুরু করে আইরিন। সারাদিন অনশনের পর ওই দিন রাতে স্থানীয় গ্রাম সর্দার ও গণ্যমাণ্যদের মধ্যস্থতায় নাজমুলের বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা আইরিনকে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ১৪ অক্টোবর ৩ লক্ষ টাকা কাবিনে আইরিনদের বাড়িতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের কিছুদিন পরই স্বামী নাজমুলসহ তার পরিবারের সদস্যরা আইরিনকে ৩ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা আইরিনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। যৌতুকের টাকা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়ে আইরিন বাবার বাড়িতে বসবাস শুরু করে।
গত ৭ এপ্রিল সকালে স্বামীর সাথে দেখা করতে শ্বশুর বাড়িতে গেলে আইরিনকে যৌতুকের দাবিতে পুনরায় শারীরিক নির্যাতন করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। একপর্যায়ে স্বামী নাজমুল আইরিনকে ঘরে থেকে বের করে টেনে-হিঁছড়ে রাস্তায় নিয়ে আঁছড়ে ফেলে। ওই নির্যাতনের ১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ১৮ এপ্রিল রাতে বিভিন্ন আইডি থেকে ফেসবুকে পোস্ট করলে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি নজরে আসায় ২০ এপ্রিল দুপুরে লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব নির্যাতিতা নারী আইরিনকে শনাক্ত করেন। এ সময় আইরিন স্বামী নাজমুল হাসান, শাশুড়ি শামীমা বেগম, ভাসুর নজরুল ইসলাম ও শ্বশুর আবুল খায়েরের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে লালমাই থানায় যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। ২০ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে মামলার তদন্তকারী অফিসার পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম নাজমুলকে নিজ গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে ।
লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, নির্যাতনের ঘটনাটি সোস্যাল মিডিয়ায় দেখেই নির্যাতিতা নারীকে শনাক্ত করি। তার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রেকর্ড করি। প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে নির্যাতনকারী নাজমুলকে গ্রেপ্তার করি।