রংপুর সংবাদদাতা :যতদূর চোখ যায় সারি সারি আম গাছ। থোকায় থোকায় দোল খাচ্ছে আম। কেবল নজর কাড়ে না। সুমিষ্ট ছোট আটি আর আশবিহীন রসালো ও বিষমুক্ত এই হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাহিদা সবার কাছে। কয়েক বছর ধরে ফলন ভালো হওয়াতে এবারো বেড়েছে রংপুর অঞ্চলে আম উৎপাদনের পরিধি। তবে অনাবৃষ্টি-অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং গুটি আসার আগে ঝরে যাওয়ার কারণে সু-স্বাদু হাড়িভাঙ্গা আমের ফলন গতবারের তুলনায় ভালো হয়নি। ফলন বিপর্যয়ে দুশ্চিন্তায় আছে আম চাষিরা। এবার মহামারি করোনাকালে সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পারারও আশঙ্কা করছেন তারা।
স্বাদে অতুলনীয় হাঁড়িভাঙা আম বদলে দিয়েছে রংপুরের পদাগঞ্জের অর্থনৈতিক ভাগ্য। হাঁড়িভাঙা আমের গোড়াপত্তন করেছিলেন নফল উদ্দিন পাইকার নামের এক বৃক্ষবিলাসী মানুষ। ৪৫ বছর আগে মারা যান তিনি।
এরপর উপজেলার আখিরার হাটের আব্দুস সালাম সরকারের হাত দিয়ে রংপু্র অঞ্চল পেরিয়ে গোটা দেশে সম্প্রসারিত হয়েছে এই আম। অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভের আশায় জেলার উঁচু-নিচেও পরিত্যক্ত জমিতে প্রতিবছরে বাড়ছে আমের চাষ। পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলে একটা হিমাগার স্থাপন করার দাবিও জানান হাড়িভাঙ্গা আমের সম্প্রসারক হিসেবে পরিচিত মিঠাপুকুরের সফল এই চাষি।
জনপ্রিয়তার তালিকায় থাকা এ আম জুনের ২০ তারিখের পর থেকে পরিপক্ক হবে। নির্ধারিত সময়ে বাগান মালিকরা গাছ থেকে হাড়িভাঙ্গা আম পাড়তে পারবেন। তখন থেকে বাজারজাতও করা যাবে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে এবার জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার আখিরাহাট, পদগঞ্জ, মাঠেরহাট, বদরগঞ্জের গোপালপুরসহ বেশি কিছু এলাকাতে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে সব জাতের আমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে রয়েছে হাড়িভাঙ্গা আম। জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙ্গা আমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন আম।
মৌসুমের শুরুতে হাড়িভাঙ্গার চাহিদা বেশি থাকায় এর দাম কিছুটা বেশি থাকবে। সেক্ষেত্রে প্রতি কেজি হাড়িভাঙ্গা আম ৮০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে পারে। বাজারে হাড়িভাঙ্গা কেনা ছাড়াও বড় বড় বাগান মালিকদের সঙ্গে সরাসরি এবং অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেও আম সরবরাহ করা যাবে।