বিডি ঢাকা ডেস্ক
‘আপনার চোখকে ভালোবাসুন’— এই স্লোগানকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশ্ব দৃষ্টি দিবস-২০২৫ পালিত হয়েছে। দিবসের আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, বিশ্বের মোট দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের ৯০ ভাগ সুচিকিৎসার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তারা বলেছেন, মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে চোখ হচ্ছে অন্যতম। অথচ, আমরা না জেনে না বুঝে চোখকে অবহেলা করি এবং একসময় দেখা যায়, অন্ধত্বের দিকে এগিয়ে যাই। তাই শরীরের অন্যান্য অসুখের মতো চোখকেও যদি গুরুত্ব দেয়া হয় তাহলে অন্ধত্বের হার অনেকটা কমে যাবে। তাই নিজের চোখকে ভালোবাসুন, নিয়মিত চিকিৎকের পরামর্শ নিন। চোখ হচ্ছে মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। কাজেই চোখের যত্নের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
সিভিল সার্জন অফিস ও বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে পৃথকভাবে দিবসটি পালন করা হয়।
সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিস সার্জন অফিস আয়োজিত র্যালিটি অফিসের সামনে থেকে বের হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে একই স্থানে গিয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন— সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম শাহাব উদ্দীন, সারভিলেন্স মেডিকেল অফিসার ডা. আসহাব শাহরিয়ার, ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচির রাজশাহী বিভাগের ব্যবস্থাপক আরিফ আহমেদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দীন, ব্র্যাকের জেলা সমন্বনয়ক মোমেনা খাতুন, এরিয়া ম্যানেজার আব্দুল কুদ্দুস।
সিভিল সার্জন বলেন, দৃষ্টি সম্পর্কে আমাদের সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা না হয়। প্রেশার, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ দৃষ্টিতে সমস্যা সৃষ্টি করে। শুরু থেকেই এই রোগগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে কোনো সমস্যা হবে না। অন্ধত্ব ও দৃষ্টিশক্তি হারানোর কারণ, চোখের বিভিন্ন রোগ এবং তাদের যত্ন সম্পর্কিত বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে ১ কোটি ৪৩ লাখ মানুষ দৃষ্টিজনিত ত্রুটিতে ভুগছেন। দিন দিন চক্ষু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
সভায় শিশুদের চোখের যত্নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
অন্যদিকে সকাল ১০টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের সহযোগিতায় অন্ধ কল্যাণ সমিতি চক্ষু হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে একটি জনসচেতনতামূলক র্যালি বের করে। র্যালিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর ঘুরে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে চক্ষু হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন— চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন— সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সাদিকুল ইসলাম, সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তার বক্তব্যে জানান, বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালে ৫ শতাধিক রোগীর চক্ষু অপারেশন করা হচ্ছে, দরিদ্র রোগীদের কমমূল্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, মাত্র তিন হাজার টাকায় লেন্স প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন আধুনিকমানের অনেক যন্ত্রপাতি রয়েছে, আমরা চেষ্টা করছি, অদূর ভবিষ্যতে আর যেন কাউকে চোখের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতে না হয়। তিনি আরো বলেন, এই চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসার মান ভালো দেখেই নওগাঁ, পোরশা গোদাগাড়ী থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে চক্ষু রোগীরা আসেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন— সমিতির কোষাধ্যক্ষ মো. আব্দুল হান্নান, প্রচার ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আব্দুল খালিদ, কার্যনির্বাহী সদস্য এম কোরাইশী মিলু, আব্দুল বারেক, মতিউর রহমান বরজাহান, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, রুহুল আমিন, বাদল আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ইমরান জাভেদ, ডা. জান্নাতুন ফেরদৌস, ডা. জাহাঙ্গীর আলী, ডা. মিজানুর রহমান। উপস্থাপনা করেন চক্ষু হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইউসুফ আলী।
পরে এলাকার ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০ জন শিশু শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা দেয়া হয়।