রাজশাহী সংবাদদাতা : এবার প্রত্যাশিত আম নেই রাজশাহীর বাজারে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে মৌসুমের প্রথমেই ঝরেছে অধিকাংশ মুকুল ও গুটি আম। এতে অনেকটাই হতাশ রাজশাহীর আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। গতকাল শনিবার (১৪ মে) রাজশাহীর চারঘাট, বানেশ্বর, পুঠিয়াসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে। পুঠিয়া উপজেলার নামাজ গ্রাম এলাকার একটি বাগানে আম নামাচ্ছিলেন হাজী মোহাম্মদ আতাউর রহমান। চারঘাট থানার সলুয়া এলাকার এ আম চাষির রয়েছে প্রায় ২০০০টি বিভিন্ন প্রজাতির আম গাছ। গতবার আম পেয়েছিলেন প্রায় ১২ হাজার মণ। করোনায় সেসময় তেমন বিক্রি করতে না পারলেও চলতি মৌসুমে আশা করেছিলেন দ্বিগুণ লাভের। তবে তার আশার গুড়ে বালি পড়েছে। এবার পেয়েছেন মাত্র ৬ হাজার মণ আম।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, খারাপ আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে একেবারেই আম নেই। তারপরও গতবার গুটি আম বিক্রি করেছিলাম আড়াইশ থেকে তিনশ টাকায়। তবে এবার করোনা না থাকায় এই আম বিক্রি করেছি এক হাজার টাকায়। তিনি জানান, এসব আম ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে বিক্রি করি। গত ১৩ মে জেলা প্রশাসকের দেওয়া নির্দেশনা পেয়ে আম নামানো শুরু করেছি। একই এলাকার আমচাষি মোজাম্মেল হক জানান, এবারে একেবারেই গাছে আম নেই। গাছ একেবারে ন্যাড়া হয়ে আছে। এবার শুধু বাড়িতে খাওয়ার মতো আম হয়েছে। গতবারে করোনায় এক ক্যারেট আম বিক্রি করেছিলাম আড়াই থেকে চারশ টাকায়। এবার তাও পারবো না। আমার ২০০টি গাছের মধ্যে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি গাছে বাড়িতে খাওয়ার মতো আম এসেছে। সবমিলিয়ে এবার খুব খারাপ অবস্থা বলেও জানান তিনি।
এদিকে হাজী মোহাম্মদ আতাউর রহমান অভিযোগ করে বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমাদের কোনো উপকারই করেনি। তারা যদি আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সামান্য সহযোগিতা করতো তাহলে কিছুটা হলেও আম রক্ষা সম্ভব হতো। আবার তারা যে আমের লক্ষ্যমাত্রার কথা বলছেন তা কোনো দিক দিয়েই সঠিক নয়। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে ১২ টন আমের ফলন হয়। এক্ষেত্রে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১৬ হাজার টন আম উৎপাদন হয়। তবে এবার মৌসুমের শুরুতেই বৈরী আবহাওয়ার কারণে গাছ থেকে অনেক গুটি আম ঝরে পড়ায় ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আমের ফলন ভালো না। মৌসুমের শুরুর দিকেই গাছ থেকে আমের মুকুল ও গুটি ঝরতে শুরু করে। তাই আমের ফলনও কম। আম চাষের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাষিরা একটি এলাকায় থেকে বলছে আম নেই বা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। কিন্তু আমরা ৯টি উপজেলার তথ্য একসঙ্গে সমন্বয় করে এ তথ্য বের করেছি। এবার চারঘাট, বাঘা, পুঠিয়াসহ কয়েকটি উপজেলায় আম কম হয়েছে। কিন্তু সহযোগিতা না করার বিষয়টি সত্যি না। কেউ সহোযোগিতা না চাইলে আমরা বুঝবো কীভাবে তার সাহায্য লাগবে?