অনলাইন নিউজ : দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্তদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অভয় দিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এ ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। এ ঘটনার পেছনে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের খুঁজে বের করা হবে এবং এমন শাস্তি দিতে হবে ভবিষ্যতে যেন আর কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যারা জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারে না, তারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বৃহস্পতিবার মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি আয়োজিত শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমীর অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইতোমধ্যেই এটার তদন্ত হচ্ছে। খুব ব্যাপকভাবেই তদন্ত হচ্ছে। অনেক তথ্যও আমরা পাচ্ছি। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে তাদের আমরা খুঁজে বের করবই। আমরা করতে পারব, এটা প্রযুক্তির যুগ। সে যে-ই হোক, যে ধর্মের হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবশ্যই নেয়া হবে। আমরা তা করেছি এবং করব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু মানুষের ভেতরে এই দুষ্টবুদ্ধিটা আছে, যখন একটা জিনিস খুব সুন্দরভাবে চলছে, সেটাকে নষ্ট করা। বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, সে সময় এই যাত্রাটাকে ব্যাহত করা, সেই সঙ্গে দেশের ভেতরে একটা সমস্যা সৃষ্টি করা। যারা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে না, বিশ্বাস অর্জন করতে পারে না, রাজনীতি নেই, কোন আদর্শ নেই, তারাই এ ধরনের কাজ করে।’
অনুষ্ঠানে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন ম-ল বক্তব্যের শুরুতে কুমিল্লায় ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, ‘গতকালের (বুধবারের কুমিল্লার ঘটনা) বিষয়ে আপনাকে বিব্রত করব না। শুধু এইটুকু বলব, আমাদের লোকেরা ভাল নেই, তারা ভীত। আমাদের কাছে খবর আছে আগামীকাল জুমার পর তারা ঝামেলা করতে চায়। আপনার গোয়েন্দারাও এটা জানে।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কিছুটা শঙ্কার কথা পূজা কমিটির সভাপতি বলেছেন। আমরা অবশ্যই এ ব্যাপারে জানি, আর আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি তুলে ধরে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। এই নীতিতেই আমরা বিশ্বাস করি।’
এ সময় দুর্গাপূজা নিয়ে নিজের স্মৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আগে বিভিন্ন মন্দিরে যেতাম, ঘুরতাম, খেতাম। এখন আর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পারি না। আমি বের হলেই জ্যাম লেগে যায়। তবে ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে যেতাম। এখন একটা বড় জেলে বন্দী আছি। ২০০৭-এ একটা ছোট জেলে ছিলাম।’
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় দুর্গাপূজার চতুর্থ দিনে নবমী পূজাতে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এযাবৎ যত উন্নয়ন কাজ হয়েছে তার সবটুকুই আপনি (শেখ হাসিনা) করেছেন। আমরা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, এদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য সংখ্যালঘু কমিশন ও মন্ত্রণালয় গঠন করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন ঢাকার অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জীর সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করছেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার।