শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ন

বিয়ে করার কথা বলে তালাকপ্রাপ্ত নারীদের ফাঁসানোই যার পেশা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১
  • ৩১৫ বার পঠিত
বিয়ে করার কথা বলে তালাকপ্রাপ্ত নারীদের ফাঁসানোই যার পেশা
ফাইল ফটো
অনলাইন নিউজ : বিয়ে করার কথা বলে বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়া (ডিভোর্সি) তিন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছিলেন রিজওয়ানুল ইসলাম ওরফে রিয়াদ (৩৩)। যিনি পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, চাকরি করতেন রাজধানীর বনানীর বেসরকারি একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে। ফেইসবুক ঘেঁটে ডিভোর্সি নারীদের খুঁজে বের করতেন তিনি। প্রেম ও বিয়ের কথা বলে ঘনিষ্ঠ হতেন। তারপর নানা কৌশলে তাদের কাছ থেকে ধার নিতেন টাকা। তবে এ নারীদের কাউকেই বিয়ে না করে সব ধরনের যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান রিয়াদ। সামাজিক মর্যাদাহানির শঙ্কায় পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি দুই নারী। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা আরেক নারী, যিনি নিজেও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, এ রিয়াদের বিরুদ্ধে রাজধানীর কলাবাগন থানায় মামলা করেছেন।

গত ৪ জুলাই করা মামলার পর পেরিয়ে গেছে তিন মাস। কিন্তু এখনো রিয়াদের অবস্থান জানতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমিত আহমেদ  বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত তদারকিতে সিনিয়র কর্মকর্তা রয়েছেন। এখনো আসামির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাকে গ্রেপ্তার করার জন্যই আমরা খুঁজছি।’

ভুক্তভোগী নারী প্রকৌশলী  বলেন, ‘রিয়াদ কর্মজীবী ডিভোর্সি নারীদের খুঁজে খুঁজে সম্পর্ক গড়েন। তারপর তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে হাওয়া হয়ে যান। তার সঙ্গে যখন সম্পর্ক হয়, তখন তার বিষয়ে এসব তথ্য জানা ছিল না। পরবর্তীকালে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, সনাতনধর্মী এক ডিভোর্সি নারীসহ নীলফামারী জেলার আরেকজন নারীকে একই কৌশলে ঠকিয়েছেন। তাদের কেউই মানসম্মানের ভয়ে তার কথা প্রকাশ করেননি।’ রিয়াদ নীলফামারী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে এসএসসি পাস করেন। ওই বিদ্যালয়ের একাধিক সহপাঠী বলেন, স্কুলজীবনে রিয়াদ ভালোই ছিলেন। পরে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সান্ধ্যকালীন এমবিএ করেন। এই সময়কালে তার সঙ্গে অনেক নারীর প্রেমের সম্পর্ক হয়। তবে তাদের কাউকেই বিয়ে করেছেন বলে কারও জানা নেই। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে এক নারী রিয়াদের খোঁজ করার জন্য তার বন্ধুমহলের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপরই বন্ধুরা জানতে পারেন, রিয়াদ ডিভোর্সি নারীদের সঙ্গে শুধু সম্পর্কই করতেন না, টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটিয়েছেন। এরপর থেকে রিয়াদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ কন্ধ করে দিয়েছেন তার বন্ধুরা।

রিয়াদের চারিত্রিক দিক তুলে ধরে তার এক সহপাঠী বলেন, ‘রিয়াদ শুধু এনজয়, টাইম পাস ও ফিজিক্যাল ডিমান্ডের জন্যই নারীদের ফাঁদে ফেলত। কাউকে জীবনসঙ্গী করার জন্য নয়। বাড়তি ইনকাম হিসেবে কৌশলে টাকা-পয়সাও অনেকের কাছ থেকে নিয়েছে।’

রিয়াদের গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর পূর্ব কুখাপাড়ার নতুন জেলখানা রোডে। তার বাবার নাম মো. সফিকুল ইসলাম। বনানীর একটি সফটওয়্যার ফার্মে চাকরিকালে থাকতেন মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটির ৪ নম্বর সড়কের ১৯৭ নম্বর বাড়িতে। প্রতারণার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে রিয়াদের ব্যবহৃত একাধিক মোবাইল ফোন নম্বরে কল করে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। তার বাবা শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।

ভুক্তভোগী নারী প্রকৌশলী করা মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে রিয়াদের সঙ্গে ওই নারীর ফেইসবুকে পরিচয় হয়। তারপর প্রেমের প্রস্তাব দেয় রিয়াদ। ওই নারী তখন বলেন, প্রেম নয়, বিয়ের ব্যাপারে তিনি চিন্তাভাবনা করছেন। এরই মধ্যে ওই নারী গত ফেব্রুয়ারিতে টিউমারের চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। সেখান থেকে ফেরার পর রিয়াদ তার সুস্থতার জন্য অনেক যত্ন নেয়। ভালো আচরণের মাধ্যমে ওই নারী ও তার পরিবারের সদস্যদের আস্থা অর্জন করে রিয়াদ। এর কিছুদিন পর তারা দুজন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে গত ৫ মে রিয়াদ তার ছোট ভাইয়ের বিয়ের কথা বলে ৪ লাখ টাকা ধার চেয়ে বসে। ৭ মে ওই নারী তার একটি ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে আড়াই লাখ টাকা রিয়াদের হাতে তুলে দেন। সেই টাকা নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পর থেকেই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় রিয়াদ। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে দুর্ব্যবহার শুরু করে। কিছুদিন পর আরেক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতে পেরে মামলার বাদী নারী রিয়াদের বন্ধুদের মাধ্যমে তার খোঁজ করার চেষ্টা করেন। এরই একপর্যায়ে গত ২৬ মে রাতে রিয়াদ এই নারীর বাসায় যায়। তার আচরণের জন্য ক্ষমা চায়। সবকিছু ঠিকঠাক করে অল্পদিনের মধ্যেই বিয়ের আশ্বাস দিয়ে সেই রাতে তার বাসায় থাকতে চায়। পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাকে ধর্ষণ করে কাউকে কিছু না বলার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায় রিয়াদ। পরদিন পাওনা টাকার জন্য মোহাম্মদপুরের বাসায় গেলে বাসার দারোয়ান দিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেয় রিয়াদ।

দেরিতে মামলা করার কারণ প্রসঙ্গে ওই নারী বলেন, ‘ঘটনার পর তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যাই। তাদের কাছে প্রতিকার চাইলে কোনো সহযোগিতা করেনি। পরে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করলে সবাই ধর্ষণ মামলা না করার পরামর্শ দিলে ধর্ষণ বিষয়ে নীরব থাকতে বাধ্য হই।’

পুলিশের নিউ মার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান  বলেন, ‘রিয়াদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়েছে। সেই মামলার আসামি হিসেবে রিয়াদকে ধরার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কোথাও তার সন্ধান মেলেনি। এ আসামি যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সেজন্য পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন শাখায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মামলার আরও কিছু আলামত পরীক্ষার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই তার সব বিষয়ে জানা যাবে। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com