অনলাইন নিউজ : বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাংলাদেশে অনেকটা সহনীয় মাত্রায় চলে এসেছে। গত দুই মাস ধরে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত কমছে। গত কয়েক দিন ধরে করোনা মহামারির শুরুর দিকের পর্যায়ে চলে এসেছে মৃত্যু ও শনাক্ত। এই অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে করোনা বিদায়ের পথে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে পরিস্থিতি আবারও অবনতি হতে পারে সেই আশঙ্কায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা। সরকারের পক্ষ থেকেও বারবার এ ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে।
করোনাকালের শুরুতে ব্যাপক আলোচনায় থাকা বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. বিজন শীল বুধবার একটি অনুষ্ঠানে করোনা নিয়ে আশার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্বে বাংলাদেশই প্রথম করোনামুক্ত হবে এবং দ্বিতীয়বার এই দেশে করোনা বিপর্যয়ের সম্ভাবনা নেই।
সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (গবিসাস) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিজন কুমার বলেন, করোনাভাইরাসের নিয়মিত মিউটেশন (রূপ বদলানো) ঘটছে। বাংলাদেশে সংক্রমণ অনেক কমে এসেছে। আমি আগেই বলেছি, বাংলাদেশই প্রথম করোনা মুক্ত হবে। আর দ্বিতীয়বার সংক্রমণের আশঙ্কা করছি না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, টানা দুই সপ্তাহ যাবত শনাক্তের সংখ্যা রয়েছে দুই শতাংশের নিচে। সর্বশেষ ১ নভেম্বর শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং একই ধারাবাহিকতায় ২ নভেম্বর শনাক্তের হার থাকে এক দশমিক ১৪ শতাংশ। আর ৩ নভেম্বর (বুধবার) এই হার ১.৩১ শতাংশ। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে খুব শিগগির শনাক্ত সংখ্যা শূন্যের কোঠায় চলে আসার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুধবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ৬০৬ তম দিনে ৩১ জেলায় কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। শনাক্তের হারও কমে ১.৩১ শতাংশে অবস্থান করছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু ২৭ হাজার ৮৮০ জনের। আর শনাক্ত হয় ২৫৬ জন। গত ৫ আগস্ট দেশে সর্বোচ্চ ২৬৪ জন রোগী মারা যায়। গত ২৮ জুলাই সর্বোচ্চ শনাক্ত হয় ১৬ হাজার ২৩০ জন।
এদিকে মৃত্যু ও শনাক্ত শূন্যের কাছাকাছি পর্যায়ে অবস্থান করলেও স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে অবহেলা করা উচিত হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যাওয়ার পরও আবার অবনতি হয়েছে। পাশের দেশ ভারতেও দিন দিন করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথম দিকে মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক ছিল তা এখন অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। এখন মানুষ অনেক সচেতন। এছাড়াও অনেক মানুষই টিকার আওতায় এসে গেছে। তাই সংক্রমণও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। তবে সংক্রমণ কমলেও তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তাই সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম ভার্চুয়াল বুলেটিনে বলেন, করোনা সংক্রমণের এখন যে জায়গাটিতে আছি আমরা, ভ্যাকসিনেশন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এই দুইয়ের সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে সেটিকে ধরে রাখা সম্ভব। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি ও শিষ্টাচার অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবার বিষয়টি অবশ্যই আমাদের মাথায় রাখতে হবে। যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত রয়েছেন, তাদের জ্বর বা কোভিডের উপসর্গ থাকলে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ নিতে হবে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর এর ১০ দিন পর প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। এরপর কয়েক মাস মৃত্যু ও শনাক্ত ঊর্ধ্বগতিতে থাকার পর গত বছরের শেষ দিকে এসে তা অনেকটা কমে যায়। চলতি বছরের প্রথম তিন মাস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল করোনা পরিস্থিতি। তবে মার্চের শেষ দিক থেকে দেশে বাড়তে থাকে করোনার প্রকোপ। এটাকে বিশেষজ্ঞরা করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা বলে জানান।
গত এপ্রিল মাস থেকে বাড়তে থাকা করোনার প্রকোপ চরম আকার ধারণ করে জুলাইয়ে। এই মাসে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জন মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া দিনে শনাক্তের সংখ্যাও ১৫ হাজার ছাড়ায়। তবে আগস্টের শেষ দিক থেকে করোনার প্রকোপ কমতে থাকে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস পুরোটাই করোনার প্রকোপ নিম্নমুখী ছিল। নভেম্বরেও তা অব্যাহত রয়েছে।