অনলাইন নিউজ : গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর ফলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে বাস ও লঞ্চ চলাচলের ঘোষণা দিয়েছেন মালিকরা। সোমবার (৮ অক্টোবর) সকাল থেকে পুরোদমে নতুন ভাড়ায় বাস ও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। নতুন ভাড়া নিয়ে যাত্রীর সঙ্গে চালকের সহকারীর বাগবিতণ্ডাও হচ্ছে। কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুলছেন- সব চাপ জনগণের ওপর কেন? কেউ আবার মনে করছেন বাস ভাড়া বাড়িয়ে সরকার অন্যায় করেছে।
সোমবার (৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বাসে এমন চিত্র দেখা যায়।বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জাকিয়া আফরোজ। মিরপুর ১২ নম্বর থেকে যাচ্ছিলেন গুলশান ১ নম্বরে। রব রব পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বাসের কন্ডাক্টরের সঙ্গে। আরিফ এ প্রতিবেদককে বলেন, বিআরটিএ ভাড়া বাড়িয়েছে কিলোমিটার প্রতি ১.৮ টাকা। কিন্তু কন্ডাক্টর বেশি ভাড়া চাচ্ছেন। বলতে পারছেন না কত টাকা ভাড়া বেড়েছে অথচ চাইছে অতিরিক্ত ভাড়া। মিরপুর থেকে গুলশানের ভাড়া আগে ছিল ২৫ টাকা। এই ভাড়া বেড়ে হতে পারে ৩০ টাকা। সেখানে কন্ডাক্টর ভাড়া নিচ্ছেন ৩৫ টাকা।
তিনি বলেন, কন্ডাক্টর যে ভাড়া চাচ্ছেন তা ৫০ শতাংশেরও বেশি। করোনাকালে ৪০ শতাংশ হারে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। এখন যে ভাড়া নিতে চাচ্ছেন কন্ডাক্টর তা তো দেখি করোনাকালের থেকেও ভাড়া বেশি।
একই বাসের যাত্রী বেসরকারি কর্মকর্তা মো. ফয়সাল। যাবেন মহাখালী। অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ায় তিনিও জড়িয়ে পড়েন বাকবিতণ্ডায়। রহমান বলেন, বিআরটিএ যে ভাড়া বাড়িয়েছে তার থেকেও অনেক গুণে বেশি নিচ্ছেন কন্ডাক্টর। ১৫ টাকা জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এই কারণে কি একজন যাত্রী থেকেই সেই বাড়তি টাকা তুলবে? সব মাশুল কি শুধু সাধারণ মানুষরাই দেবেন?
নতুন বাস ভাড়ায় খুশি নন এমন মানুষদের একজন কারওয়ান বাজারের ছোট একজন ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান। তিনি গুলিস্তান থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত আগে বাসে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতেন। আজ থেকে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করায় বাসের চালকের সহকারী ১৫ টাকা ভাড়া চাওয়ায় তিনি দিতে রাজি হননি। এ নিয়ে পুরো রাস্তাজুড়ে হাবিবের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা চলে চালকের সহকারীর। হাবিবের সঙ্গে এ প্রতিবেদককের কথা হয় বাংলামোটরে।
তিনি বলেন, প্রথমত বাস ভাড়া বাড়িয়ে সরকার একটা অন্যায় করেছে। ওদের দাবি-দাওয়া আমাদের পকেটের ওপর দিয়ে চালিয়ে দিয়েছে। গুলিস্তান থেকে কারওয়ান বাজারের ভাড়া ১৫ টাকা হয় কীভাবে? ১০ টাকা দিয়ে শাহবাগ নেমে এতটুকু রাস্তা হেঁটেই এলাম।
বাংলামোটরে বাসের জন্য অপেক্ষারত নয়ন নামে আরেকজন বলেন, ‘ডিজেলের দাম বেড়েছে, সেই অজুহাতে তারা আমাদের তিনদিন জিম্মি করে রাখলো। যেই সরকার ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল, তারা রাস্তায় নেমে গেল। কেউই আসলে আমাদের পক্ষের না। সবাই যার যার সুবিধা নিয়ে ব্যস্ত। যত পারো জনগণের পকেট কাটো! সরকার তো চাইলে ভর্তুকি দিতে পারতো, আর বাসমালিক পক্ষ তেলের দাম কমানো নিয়ে আন্দোলন করতে পারতো।’
গাড়ির চালক ও তাদের সহকারীদের ভাষ্য, তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে বাড়তি কোনো টাকা নিচ্ছেন না। শিকড় পরিবহনের একটি বাসেন চালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে যাত্রীদের সঙ্গে ঝামেলা লেগেই আছে। যাত্রীরা নতুন ভাড়া দিতে রাজি হচ্ছে না। এটা তো আমরা করি নাই, সরকার ও বাস মালিক-সমিতি করছে। আমরা চাকরি করি।’
চালকের সহকারী ইদ্রিস জানান, ভাড়া নিয়ে কম-বেশি সবাই তর্কাতর্কি করছে। পারলে অনেকে মারতে আসে। আমার তো কিছু করার নাই।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে পরিবহন মালিকদের দাবির মুখে গণপরিবহনে নতুন করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। পুনঃনির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী এখন থেকে রাজধানীতে বাস যাত্রীদের সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা এবং মিনিবাসের জন্য গুনতে হবে ১০ টাকা। সারাদেশে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। আর মহানগরীতে বিভিন্ন রুটের বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। যেসব বাস সিএনজিচালিত সেগুলো এই নতুন ভাড়ার তালিকায় পড়বে না। সিএনজিচালিত বাস আগের ভাড়ায় চলবে।
এ জাতীয় আরো খবর..