অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। কিনোট পেপার উপস্থাপন করেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। প্যানেল আলোচকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র গবেষক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরদৌসি নাহার, ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ড. সাজ্জাদ জহির, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, ইউরোপ ইউনিয়নের হেড অব ডেলকেশন এবং রাষ্ট্রদূত রেনজে তেরিঙ্ক।
এর আগে সকালে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ৪১তম, অর্থাৎ সর্বশেষ স্প্যানটি। ৪০তম স্প্যান বসানোর ছয় দিনের মাথায় বসানো হলো এ স্প্যান। ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি স্প্যান বসানোয় ৬ হাজার ১৫০ মিটার সেতুর অবকাঠামো দৃশ্যমান হলো।
গত দুই মাসে সেতুতে আটটি স্প্যান বসিয়ে রেকর্ড গড়েছেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা। এ মাসেও দুটি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে বিজয়ের মাসে স্প্যান বসানোর কাজটি সম্পন্ন হলো। সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর ৪১তম স্প্যান ‘টু-এফ’ সফলভাবে স্থাপন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ফিরে পুনরায় পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে আসে বিশ্বব্যাংক। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে থাকে। ২০১০ সালের জুলাইয়ে সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-যোগ্যতা দরপত্র মূল্যায়ন করে পাঁচ দরদাতাকে বাছাই করে তা বিশ্বব্যাংকের অনাপত্তির জন্য পাঠানো হলেও সংস্থাটি তা ঝুলিয়ে রাখে।
এরপর পদ্মা সেতুতে ‘সম্ভাব্য দুর্নীতির’ অভিযোগ আনে বিশ্বব্যাংক। দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংককে ‘না’ বলে দেয়। শেষ পর্যন্ত নকশা অপরিবর্তিত রেখে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় সেই বিপুল কর্মযজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মূল সেতুর নির্মাণ ও নদী শাসন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
মূল সেতু নির্মাণের কাজটি করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি কোম্পানি সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।
সিনোহাইড্রো করপোরেশনই পদ্মা সেতুর জন্য নদীশাসনের কাজ করছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত সে কাজের ৭৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে নভেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছিল।
৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। তাতে মোট দেশজ উৎপাদন ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে এবং প্রতি বছর শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমবে বলে সরকার আশা করছে।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান। মোট ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো তৈরি হয়। কিন্তু মাঝে ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া গেলে নকশা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। পরে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নকশা সংশোধন করে পাইল বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। তাতে বাড়তি সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর। এরপর করোনাভাইরাস মহামারি আর বন্যার মধ্যে কাজের গতি কমে যায়। সব বাধা পেরিয়ে অক্টোবরে বসানো হয় ৩২তম স্প্যান। এরপর বাকি স্প্যানগুলো বসানো হয় অল্প সময়ের মধ্যেই।