বিডি ঢাকা ডেস্ক
চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কৃষি খাতের ভর্তুকি ৮ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল বাজেটে এ খাতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এছাড়া চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা বাবদ ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার মানের অবমূল্যায়ন, জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়া এবং এলএনজির দাম বৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছরেও ব্যাপক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
ঐ কর্মকর্তা আরও জানান, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি ভর্তুকির জন্য ১৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এ খাতে ভর্তুকি কত রাখা হবে, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।তবে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশ করা বৈশ্বিক পণ্যমূল্যের প্রতিবেদনের (পিংক শিট) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের তুলনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেশ কম ছিল।চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন ইউরিয়া সারের দাম ছিল ৩৫১.৩০ ডলার। এছাড়া প্রতি টন ডিএপির দাম ৫৮৩.৮০ ডলার, প্রতি টন টিএসপির দাম ৪৫৪.৪০ ডলার এবং প্রতি টন এমওপির দাম ছিল ২৮৯.৪০ ডলার।২০২৩-এর এপ্রিলে সরকার ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়ায়। কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া ও টিএসপি সারের দাম ২২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা, ডিএপির দাম ১৬ টাকার পরিবর্তে ২১ টাকা ও এমওপি সারের দাম ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ঐ সময় কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় সারের আমদানি যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা এবং সারের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পণ্যটির দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে দেশে ২৭ লাখ টন ইউরিয়া সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া টিএসপি ৭.৫ লাখ টন, ডিএপি ১৬ লাখ টন ও এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে ৯ লাখ টন। এর মধ্যে ১০ লাখ টন ইউরিয়া, ১ লাখ টন টিএসপি ও ১ লাখ টন ডিএপি দেশেই উত্পাদন করে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।চলতি অর্থবছরে গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত ইউরিয়া ১৫.৮৫ লাখ টন, টিএসপি ৬.৭২ লাখ টন, ডিএপি ১৩.০৫ লাখ টন ও এমওপি ১০.৩৪ লাখ টন আমদানি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে মন্ত্রণালয়।কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাজেটবিষয়ক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতি বছরই মূল বাজেটে কৃষি ভর্তুকি বাবদ যে বরাদ্দ রাখা হয়, সংশোধিত বাজেটে তা বাড়ানো হয়। তবে এই বৃদ্ধি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল সবচেয়ে বেশি। ওই অর্থবছরের মূল বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা; কিন্তু অর্থবছর শেষে ব্যয় হয়েছিল ২৬ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়; অর্থবছর শেষে খরচ হয় ১২ হাজার কোটি টাকা।
কৃষকদের কম দামে সার সরবরাহ করতে গিয়েই মূলত সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি ব্যয় হয়। এছাড়া কৃষি খাতে পল্লি বিদ্যুত্ ব্যবহার করে যে সেচ দেওয়া হয়, তার বিলের ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয়। এর বাইরে আখ চাষে সামান্য ভর্তুকি রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা বাবদ ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে ৫৩০ কোটি টাকা সার, বীজ ও চারা বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হবে। কৃষকদের নতুন জাতের বীজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা, এক ধরনের ফসল থেকে অন্য ধরনের ফসল চাষে আগ্রহী করতে এ সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। আর ৭০ কোটি টাকা দেওয়া হবে অনুদান। খরা, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এই অনুদান দেওয়া হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে সরকার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।