বিডি ঢাকা ডেস্ক
বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চাল আমদানির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। বন্যা, আন্দোলন ও ক্ষমতার পালাবদলে সরবরাহ ঘাটতিতে চালের দাম ক্রমাগত চড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর এ উদ্যোগ নিল।
এর ফলে চাল আমদানির ক্ষেত্রে এখন কেবল ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রযোজ্য থাকছে। তাও কমিয়ে ২ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে বলে এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। চাল আমদানিতে আগে সব মিলিয়ে শুল্ক-কর ছিল ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ (২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ২৫ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর)।
গত ২০ অক্টোবর চালের ওপর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয় ৫ শতাংশ। আর ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু তাতে আমদানিকারকদের তেমন সাড়া না মেলায় আমদানি পর্যায়ে সব শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করে এনবিআরকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)।
ট্যারিফ কমিশনের চিঠির প্রেক্ষিতে এনবিআর সবকিছু বিশ্লেষণ করে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে শুল্ক ও কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় বলে রাজস্ব বোর্ডের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান।
তিনি বলেন, “যে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আছে, সেটাও কমিয়ে ২ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্রুতই এ বিষয়ে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি হবে। গত ২০ অক্টোবর শুল্ক ছাড়ের ঘোষণায় এনবিআর বলেছিল, ওই সিদ্ধান্তের ফলে চাল আমদানির ব্যয় প্রতি কেজিতে ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে বলে তারা আশা করছে।
কিন্তু আমদানি না হওয়ায় এ সুফল বাজারে মেলেনি। চালের বাজার দুই মাস ধরেই চড়া। সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে গত এক মাসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক কমানোর পর ভিয়েতনাম থেকে ২৬ টন চাল আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে ২৭ অক্টোবর।
এনবিআরে পাঠানো ট্যারিফ কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, এলসি খোলার এমন দুর্বল প্রবণতা চালের বর্ধিত চাহিদা পূরণের চেষ্টাকে ‘ঝুঁকিতে ফেলবে’। শুল্ক-কর ছাড়ের আগে পরে মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৯৫৭ টন চাল আমদানি হয়েছে।
এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৩৪ দশমিক ১৮ টন চাল আমদানি হয়েছিল, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ১২ লাখ ৩৭ হাজার ১৬৮ টন চাল। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৪৮ টন।
বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি বাড়াতে খাদ্য মন্ত্রণালয় শুল্ক কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয় সেপ্টেম্বরের শেষে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, খাদ্য মজুত গড়ে তোলা ও কৃষকদের উৎসাহ দিতে চলতি বোরো মৌসুমে ৫ লাখ টন ধান ও ১৪ লাখ ৭০ হাজার টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭০ টন ধান ও ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৪৯৭ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারি গুদামে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪০ টন চাল এবং ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯২৮ টন গমসহ মোট ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ১৯৯ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে।
সম্প্রতি দেশের ১৪ জেলায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। ফলে আউশ, রোপা আমন এবং আমন বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। তাতে আমন ওঠার পরও চালের দাম বেড়ে যেতে পারে বলে ওই চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়।
বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি ও দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় এর আগে ভোজ্যতেল, চিনি ও ডিম আমদানিতেও শুল্ক ছাড় দিয়েছে এনবিআর।