বিডি ঢাকা ডেস্ক
রাজশাহী অঞ্চলে চলছে আমনের ভরা মৌসুম। ক্ষেতের ফসলে রোগ-বালাই দমনে নানা পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম কীটনাশক। আর এসব কীটনাশক ৯০ ভাগ গ্রামের কৃষক বাকিতে কেনে থাকেন। যার কারণে দোকানীরা তাদের মনমতো কৃষকদের অনুমোদনহীন বা ভেজাল কীটনাশক দিয়ে থাকেন। কৃষকদের ফসলের মোট খরচের বেশি অর্ধেকটাই যাই কীটনাশক প্রয়োগে। বর্তমানে বাজারে বেশির ভাগ কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকা দমন হচ্ছে না বলে কৃষকদের অভিযোগ।
কীটনাশক উৎপাদনকারী বিভিন্ন নামীদামি কোম্পানী নকল ব্র্যান্ডের ভেজাল কীটনাশক বিক্রি হচ্ছে অবাধে। এতে শুধু যে কৃষক ঠকছে ও কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল রাজস্ব থেকে। মূলত বাজারে তুলনামূলকভাবে দাম কিছুটা কম ও মোড়ক দেখে আসল না নকল তা না চিনেই কীটনাশক কিনে থাকেন আনেক কৃষক। যার ফলে রাজশাহী অঞ্চলের বাজারে এখন চলছে ভেজাল কীটনাশকের রমরমা ব্যবস্যা।
আর এসব ভেজাল কীটনাশকের একাধিক কারখানা ও সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে জেলার মোহনপুর উপজেলার কেশরহাটে ও নওগাঁর জেলার সাবাইহাটে।
বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে সবচেয়ে বেশি নকল ও ভেজাল কীটনাশক সিনজেন্টা এমিস্টর টপ। এ কীটনাশক ধানের পচন রোগ সারাতে বেশ কার্যকারী। তাই কৃষকদের চাহিদা ও বেশি। আর এ সুুযোগে প্রায় কীটনাশক ডিলার সিনজেন্টা কোম্পানীর মোড়কে ভেজাল এমিস্টরটপ বিক্রি করতে শুরু করেছেন। সরকারের কাছে কৃষকদের দাবি, বিশেষ করে ভেজাল ও নকল কীটনাশকের বিষয়ে যেন নিয়মিত মাঠ পর্যায়ের কীটনাশকের বাজার মনিটরিং করা হয়।
তবে মাঠ পর্যায়ের একাধিক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা স্বীকার করছেন, কোম্পানীর কর্তৃত্বপত্র ছাড়াই যততত্র কীটনাশক বিক্রি করছেন অনেক অসাধু ডিলার। আর বেশি ভাগ কৃষক বাকিতে কীটনাশক ক্রয় করে। এতে দোকানীরা তাদের ইচ্ছা মত অনুমোদনহীন কোম্পানীর কীটনাশক বা ভেজাল কীটনাশক মেমো ছাড়া কৃষকদের দেন।
এছাড়াও কীটনাশক বোতলের নামীদামি ব্যান্ডের মোড়ক দেখে চেনার উপায় থাকে না এগুলো নকল না আসল। তবে কৃষকেরা এসব কীটনাশক ব্যাবহার করে কোন কাজে আসছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। আমরা বিষয়গুলো উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে জানিয়েছি।
কীটনাশক বিক্রি করেন এমন কয়েকজন দোকানী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মোহনপুর উপজেলার কেশরহাটে ভেজাল কারখানায় প্রতিনিয়ত সিনজেন্টা, অটো, সহ, দেশের নামিদামি কীটনাশক কোম্পানী ব্যান্ডের মোড়কের বোতলে ভরা এসব ভেজাল কীটনাশক দেদারসে বাজারে বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক দামে।মোহনপুরের শ্যামপুর বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নকল কীটনাশক।
এখান থেকে জেলায় বিভিন্ন প্রান্তে ছোট বড় ডিলারদের কাছে পৌচ্ছে দেয়া হচ্ছে ভেজাল ও নকল কীটনাশক।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা বাজারে প্রায় ১০টির মত কীটনাশক দোকান রয়েছে। শনিবার ৭ টি কীটনাশক দোকানে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সাতটি দোকানের মধ্যে অন্তত তিনটি দোকানে সিনজেন্টা কোম্পানীর ভেজাল ও নকল ইমিস্টর টপ বিক্রি অনেকটা প্রকাশ্যে। এ চারটি দোকানের সিনজেন্টা কোম্পানীর এজেন্ট বা কর্তৃত্বপত্র নেই।
এছাড়াও বরেন্দ্রের চাঁপাই সদর উপজেলার আমনুরা মোড়ের একটি দোকান জামতলা মোড়ের একটি ও ধি-নগর মোড়ে একটি দোকানে ভেজাল এমিস্টরটপ বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তানোর উপজেলার বাধাইড় গ্রামের কৃষক শামিম বলেন, তার আমন ক্ষেতে পচন রোগ দেখা দেয়। মুণ্ডুমালা বাজারের একটি দোকান মালিকের কাছে গিয়ে ক্ষেতে পচনের কথা জানালে তিনি এমিস্টর টপ নামের একটি বড় কীটনাশক বোতল দেন। বোতলের গায়ে ১৯৫০ টাকা মুল্য থাকলেও দোকানী তাকে ১৫০০ টাকায় দেন। কিন্ত এক সপ্তহের বেশি সময় পার হলেও পচন কোন প্রকার দমন করতে পারিনি। পরে বুঝতে পারি এমিস্টরটপ টি নকল মোড়েকে ছিল।
মুন্ডুমালা পৌর এলাকার প্রকাশনগর গ্রামের কৃষক মিজান বলেন, তিনি মুন্ডুমালা বাজারের একটি দোকানে বাকিতে কীটনাশক কেনেন। তার প্রায় সাত বিঘা আমন ধানে পচন ধরেছে এমন কথা কীটনাশক দোকানীকে জানালে তাকে একটি এমিস্টরটপের বড় বোতল ধরিয়ে দেন।
এ দুইটি কৃষকের অভিযোগের সত্যতা জানতে মুণ্ডুমালা বাজারে দোকান দুটিতে গিয়ে জানা যায় তারা সিনজেন্টা কোম্পানীর ডিলার নয়। তবুও কেন এ কোম্পানীর কীটনাশক বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের কোন উত্তর তারা দিতে পারেনি।
এমন ভেজাল কীটনাশকের শিকার শুধু তানোর উপজেলার কৃষকেরাই নয়, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, মোহপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর সহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলা নাচোল সহ বরেন্দ্র অঞ্চলের হাজারা হাজার কৃষক এসব ভেজাল ও নকল কীটনাশক কেনে প্রতিনিয়ত ঠকছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক উম্মে সালমা বলেন, বাজারে ভেজাল ও নকল কীটনাশক পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা অভিযান চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে কিছু দোকানের ভেজাল কীটনাশক পাওয়ায় জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের অভিযান চলবে।
তবে কৃষকদের কীটনাশক কেনার সময় অবশ্যই সে কীটনাশক ডিলালের কাছে মেমো সংগ্রহ করতে হবে। কারণ কীটনাশক ব্যবহার করে কোন কাজ হচ্ছে না পরে তথ্য প্রমান পাওয়া যায় না। আর মেমো নেওয়ার পরে যদি কাজ না হয় সে ক্ষেত্রে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারবো। সেক্ষেতে কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে।