বিডি ঢাকা ডেস্ক
শিবগঞ্জে পাটচাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফিরেছে সোনালী আঁশের কদর। কৃষকরা অনেক খুশিও। কারণ, এবছর যেমন দাম , তেমনি ফলন। এক সময় পাটই ছিল বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরি ফসল। মধ্যখানে পলিথিনের ব্যবহার বেড়ে যাওযায় পাটজাত পণ্যের ব্যবহার কমে গিয়েছিল।
বর্তমানে পলিথিনের তৈরি পণ্যের ব্যবহার কমে পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ায় পাটের চাহিদা বেড়েছে। সংগে সংগে বেড়েছে পাটচাষির সংখ্যা ও চাষের পরিমাণ।। সংশ্লিষ্ট কৃষি দপ্তর জানায়, শিবগঞ্জের মাটি পাট-উপযোগী। দাম ভাল পাওয়ায় পাটচাষিদের সংখ্যাও বাড়ছে। মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, এ বছর আমার সাত বিঘা পাট ছিল।
উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাক্।া সরকার থেকে কোন ধরনের প্রণোদনা পাইনি। ফলন হয়েছে বিঘা প্রতি ১২মণ। ৩৫০০টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। খরচ বাদে আয় হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। পাটকাঠি অর্থাৎ পাটখড়ি পেয়েছি প্রায় ১২০ মণ। পাটখড়ির দামও ভাল। বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৬০০ টাকা দরে। গত বছর ছিল তিন বিঘা।
সামনে বছর প্রায় ১০বিঘা পাট চাষের ইচ্ছা আছে। দূর্লভপুর ইউনিয়নের জগনাথপুর গ্রামের শাহাজান বলেন, তিন বিঘা পাট চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩০মণ। বিক্রি করেছি ৩৪০০ টাকা মণ দরে। পাটখড়ি হয়েছে প্রায় ৪০মণ। ইচ্ছা আছে সামনে বছর আরো বেশি করে আবাদ করবো।
উপজেলার বিভিন্ন এলাাকা ঘুরে পাটচাষি বদিউর রহমান, মিলন সামাদ, সেলিম, মাহাতাব আলি, আনারুল হক সহ অনেক কৃষক জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর পাটের উৎপাদন ও দাম ভাল পাওয়া গেছে। খরচ বাদে লাভ হয়েছে বিঘা প্রতি ২৫ হাজার টাকা। দেশে পাট উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে সোনালী আঁেশর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চায় তারা।
পাটচাষি ফারুক হোসেন, সাইদুর রহমান, মহসিন আলি জানান, পলিথিন ব্যবহারে পরিবেশ দুষণ, জমির উর্বরতা হ্রাস, রাস্তাঘাট নোংরা, নতুন নতুন রোগবালাই বৃদ্ধি সহ নানা ধরনের ক্ষতির সম্মখীন হতে হচ্ছে। তাই পাট চাষ বৃদ্ধি করে পাট থেকে তৈরি পণ্য ব্যবহার করলে এ সমস্ত সমস্যার সমাধান হতে পারে।
গৃহবধু মোসলেমা বেগম, মমতাজ বেগম, নাজিরা বেগম সহ শতাধিক হতদরিদ্র নারী জানান, পাটচাষিদের জাগ দেয়া পাট থেকে আটি থেকে আঁশ ছাড়িয়ে অর্ধেক পাটখড়ি পারিশ্রমিক হিসাবে পাচ্ছি। সেখান থেকে এ মৌসুমে তাদের প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়েছে। জ¦ালানির কিছু রাখা হয়।
কলেজ শিক্ষক হারুন অর রশিদ, শামীম উদ্দিন, স্কুল শিক্ষক শরিফুল ইসলাম, পল্লী চিকিৎসক আব্দুল সালাম সহ অনেকের মতে পাটজাত তৈরি পণ্যের ব্যাপক ব্যবহারেই পলিথিন ব্যবহার বন্ধ হবে। তারা পাট উৎপাদন বৃদ্ধিতে পাটচাষিদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা চায়। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার নয়ন মিঞা জানান, এ বছর ৮৯৮০ পাটচাষি ১৯১০ হেক্টর জমিতে, রবি, মহারাষ্ট্র, সিভিই ৩, সিসি-৪৫ এইচ এস-২৪, বিজেআইআর ৫২সহ সাত প্রজাতির পাট চাষ করেছেন।
যা গতবার ৮৩০০ জন কৃষক ১৮৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। কৃষকের সংখ্যা বেড়েছে ৬৮০জন এবং জমির পরিমাণ বেড়েছে ৬০ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছে হেক্টর প্রতি ২.৪৯ মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭৬৪ মেট্রিক টন। গত বছরের চেয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির পরিমাণ ৭৬৪ মেট্রিক টন।