ফয়সাল আজম অপু : “নেই কাজ তো খৈ ভাজ” আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রামের ভাষায় বলা উপরের এই প্রচলিত প্রবাদের সাথে মিল রেখে চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার রানিহাটী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুরহাটে প্রায় ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে, সবজি পট্টির মধ্যে খানে একটি শেড ও কয়েকটি স্থাপনা তৈরি। যা দেখে মনে হয় গোদের উপর বিষ ফোঁড়া। শুধু তাই না শিডিউল অনুযায়ী নকশায় চারকোনা থাকলেও গাছের অজুহাতে শেডটি করা হয়েছে এল আকৃতির। যাতে করে টাকা বাঁচিয়ে ফায়দা লুটবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রানীহাটি ইউনিয়নের অন্তর্গত রামচন্দ্রপুর হাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সব্জি বাজারের মাঝখান থেকে প্রায় ১ থেকে ২ ফিট উঁচু করে বাঁধানো হচ্ছে। যাতে করে বাজারের সকল ব্যাবসায়ীগন সহ আশপাশে বসবাসকারীরা বিপাকে পড়ার আশংকা করছে। এই বিষয়ে ব্যাবসায়ীদের মতামত জানতে চাইলে অধিকাংশ ব্যবসায়ীর মতে এটা সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন। তারা আরো বলেন যে, বর্তমান সরকার উন্নয়নমূখী সরকার। তবে এই কাজে সরকার যে অর্থ ব্যয় করতে যাচ্ছে তার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। এটা নিছক অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। তারা আরো বলেন, সরকারের বরাদ্দকৃত এই অর্থ যদি অন্য কোন উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যয় করতো কিংবা পাশের ভগ্নপ্রায় টিনশেড গুলো ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে করতো তাহলে সবচাইতে ভালো হতো। বইয়ের দোকান মালিক আনারুল ইসলাম (আনা), স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম রেজা স্বপন, মিজানুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, আঃ সামাদ মাষ্টার সহ দোকানীরা আরও বলেন, নিশ্চয় এটা সরেজমিনে বিচার বিবেচনা না করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সব্জি বাজারের ব্যাবসায়ীদের এমন বক্তব্যের কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন যে, এই সব্জি বাজারের অবস্থান এতোটাই উন্নত যে, ভরা বর্ষা মৌসুমেও পাঁচ মিনিটের জন্য জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়না। কিন্ত যদি এই ভাবে বাজারের মাঝখানে আংশিক জায়গা উঁচু করে বাঁধানো হয় তাহলে বর্ষা মৌসুমে আশপাশে জলাবদ্ধতার আশংকা থেকে যাবে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে আশেপাশের বাড়ি গুলোতেও। কারন ড্রেনেজ কোনো সু- ব্যবস্থা নেই। শুধু তাই নয়, যারা বয়স্ক অর্থাৎ ৫০ থেকে ৬০ বছরের উর্ধ্বে বয়োবৃদ্ধরা এই উচু স্থানে উঠে কেনাকাটা করতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবারও যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আবার কেউ কেউ হাস্যরসের মাধ্যমে বলেন যে, কাজ কাম না থাকলে যা হয় এখন সেটাই হচ্ছে। বাজেটের টাকা তছরুপ আরকি। ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে বর্তমান করনীয় জানতে চাইলে তারা সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আরও বলেন যে, যদি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল তাঁর উর্ধ্বতন কর্মকতা দ্বারা বিষয়টি সরেজমিনে যাচাই বাছাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেন তাহলে আমরা গরীব ক্ষুদ্র সব্জি ব্যাবসায়ীরা ব্যাবসায়ী কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবো। পরিশেষে তারা এই কাজটি স্থগিতের জোর অনুরোধ জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, তরিতরকারি বিক্রেতাদের জন্য তৈরী যে টিন সেড গুলো অবৈধ দখলে ও নাম মাত্র ভাড়ায় রয়েছে সেই দোকান ও সেড গুলো উদ্ধার করে সংস্কার করে উন্মুক্ত করে দেয়া হোক। তারা আরও বলেন, বিগত দিনে একজন চেয়ারম্যান একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে নাম মাত্র মূল্য আড্ডার জন্য লিজ দেন বড় একটি টিন শেড। অথছ ফুটপাতে যারা পন্য বিক্রি করে তারা বসার মতো জায়গা পাইনা। তারা আরও বলেন, এগুলো উচ্ছেদের মাধ্যমে মেরামত করে তরিতরকারী সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যদ্রব্য বিক্রেতাদের সুযোগ করে দিলেইতো হয়। এভাবে উঁচু করে দেয়া নির্বুদ্ধিতার পরিচয় ছাড়া আর কিছু নয় বলেও জানান স্থানীয় সচেতন মহল। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তসিকুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে ব্যস্ততা দেখিয়ে, সদর উপজেলা প্রকৌশলীর নিকট তথ্য নিতে বলেন। অপরদিকে, সদর উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, জেলার সদর উপজেলার গোবরাতলাহাট ও রামচন্দ্রপুরহাটে প্যাকেজ আকারের কাজ এটি। এই প্যাকেজের আওতায় গ্রোথ সেন্টার, প্রায় ৬২ লাখ, ৮০ হাজার ৬’শ, ৪৭ টাকা মূল্যে পৃথক দুটি হাটে, ১ টি করে ফিস সেড, ১ টি ফাঁকা শেড প্লাটফর্ম, ২ টি পাশাপাশি কম্বাইন্ড ও টিউবওয়েল হবে। প্রয়োজনে বিস্তারিত কাজের তথ্য সংশ্লিষ্ট মেসার্স রিহান এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদারের নিকট তথ্য নিতেও বলেন তিনি। রিহান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোয়াজ আলির নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি কোনো তথ্য না দিয়ে, মর্দানা এলাকায় আছি বলে ফোন কেটে দেন।