বরিশাল সংবাদদাতা : বরিশালের উজিরপুর থানায় এক নারী আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে ২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেঞ্জ ডিআইজি মো. আক্তারুজ্জামান রবিবার এই কমিটি গঠন করে পরবর্তী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ওই আসামির শারীরিক পরীক্ষা শেষে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রতিবেদনে তার শরীরের লজ্জাস্থান সহ বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন জনসন্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন মানবাধিকার জোট বরিশালের যুগ্ম সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম।
বরিশালের উজিরপুর থানায় দুইদিন রিমান্ড শেষে গত ২ জুলাই যখন নারীকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলী আদালতে হাজির করা হয় তখন খুঁড়িয়ে হাটছিলো সে। তাৎক্ষনিক আদালত একজন নারী কনস্টেবল দিয়ে একটি কক্ষে নিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের প্রথমিক প্রমাণ পায়। আদালত তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি তার শরীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয় শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালককে। একই সাথে আদালত নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ওই নারীকে সুযোগ দেয়ার নির্দেশ দেয় রেঞ্জ ডিআইজি এবং পুলিশ সুপারকে। কিন্তু ওই নারী নির্যাতনকারীর নাম উল্লেখ করেন নি। এ কারণে নির্যাতনকারী শনাক্তে এবং এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে রবিবার রেঞ্জ ডিআইজি মো. আক্তারুজ্জামান ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার কাজী মো. সোয়াইব এবং বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিকে পরবর্তী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশালের অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম এহসান উল্লাহ বলেন, নারী আসামিকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে আদালতের নির্দেশে গত শনিবারই মিনতির শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের পরিচালক। প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজী হননি তিনি। তবে হাসপাতালের পরিচালক কার্যালয় থেকে আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে ওই নারীর দুই কুনুই, দুই পায়ের গোড়ালী, ডান পায়ের পেছনে এবং তার উভয় নিতম্বে ভোতা বস্তুর আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ রয়েছে। গত পহেলা জুলাই তাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। শের-ই বাংলা মেডিকেলের গাইনী বিভাগের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মহসেনা আক্তার এই ইনজুরী প্রতিবেদন তৈরী করেন।
অপরদিকে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন জনসন্মুখে প্রকাশের দাবী জানিয়েছেন বরিশাল মানবাধিকার জোটের যুগ্ম সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, রিমান্ডে নারী আসামিকে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হলে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জল হবে। এতে পুলিশের মধ্যে এই ধরনের অপরাধ প্রবনতা কমবে বলে জানান এই মানবাধিকার নেতা।
বর্তমানে বরিশাল কেন্দ্রিয় কারাগারে রয়েছেন ওই নারী। গত ২৬ জুন বরিশালের উজিরপুরের জামবাড়ি এলাকায় এক ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি ওই নারী। এই মামলার আসামি হিসেবে ওইদিনই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হত্যার ক্লু উদঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া নিয়েছিলো উজিরপুর থানা পুলিশ।