নিজস্ব সংবাদদাতা :পরীমণির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর তদন্ত চলছে।এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। প্রাথমিক তদন্তে তার অবাধ জীবনযাপনের নানাদিক উঠে এসেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যরাত হলেই বেরিয়ে পড়তেন পরীমণি। শুধু অল কমিউনিটি ক্লাব বা বোট ক্লাবই নয়, রাজধানীর অনেক ক্লাব বা অনুষ্ঠানে তার ভাঙচুরের খবর পাওয়া যাচ্ছে। একটি চলচ্চিত্র অনুষ্ঠানে ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন চলচ্চিত্রের একাধিক নির্মাতা। তাছাড়া তার ফেসবুকে দেখা যায়, বাড়ির ভিতরে রয়েছে বিশাল বার। বোট ক্লাবের ঘটনা নিয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলনের দিনে সাংবাদিকরা তার সেই বারের ছবি তুলতে গেলে, পরীমণি কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, বারের ছবিগুলো ছাপাবেন না।
এদিকে পরীমণির বাল্যবন্ধু যার সঙ্গে তিনি বোট ক্লাবে গিয়েছিলেন, সেই তুহিন সিদ্দিকী অমির বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজধানীর দক্ষিণখান থানায় বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত এই তুহিন সিদ্দিকী অমি। মামলার বাদী হলেন আবদুল কাদির। এ মামলায় অমি ছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- জসিম মাস্টার, সালাউদ্দিন, মোস্তফা ও পারভেজ। এ ছাড়া এই মামলায় আরও পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাইফুল ইসলাম জানান, আবদুল কাদিরের কিছু আত্মীয়-স্বজন অমির দ্বারা ভুক্তভোগী। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এর আগে অমির বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। মামলাগুলো হলো-পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলা এবং পাসপোর্ট অপরাধ আইনে মামলা। পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলার দ্বিতীয় প্রধান আসামি তুহিন সিদ্দিকী অমি (৩৩)। সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (সিরিয়াস ক্রাইম) আক্তারুজ্জামান জানান, আমরা এখনো মামলা তদন্ত সংক্রান্ত কোনো চিঠি পাইনি।
সূত্র জানায়, শত শত কর্মী বিদেশে পাঠিয়ে ও প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হন অমি। বিদেশে কর্মী পাঠানোর সূত্র ধরে সাবেক এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সঙ্গে অমির পরিবারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তাদের আলিশান একাধিক বাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুলও। অমির গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। সেখানে অনেক সম্পদ গড়েছেন। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমও গড়েছেন। অমি ৭/৮ বছর আগে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক হন। এরপর দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি করেন। এ সুযোগে আদম পাচার করে প্রচুর অর্থ আয় করেন। এই অর্থের দাপটে অমি নানা অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকার উত্তরা ও আশকোনায় তাদের একাধিক বাড়ি ও প্লট রয়েছে। দক্ষিণখানে রয়েছে তার বালাখানা। এলাকায় এক নামে তাকে সবাই চেনে। আশকোনায় তাদের সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
এদিকে অমির বাবা তোফাজ্জল হোসেন তোফা গণমাধ্যমকে বলেছেন, যদি আগে জানতাম অমিকে গ্রেফতার করা হবে। তা হলে আগেই তাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতাম। অমি ও পরীমণি ছিল স্কুলজীবনের বন্ধু। তার সঙ্গে কোনো পারিবারিক বা আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকলেও তারা খুব ঘনিষ্ঠ। অমির জন্ম ঢাকার আশকোনায়। সেখানেই বড় হয়েছে। স্কুলজীবনে পরীমণির সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি জানতে পারেন পরীমণির করা মামলায় অমিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।