শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩৮ অপরাহ্ন

রবিবারের ঝড়ে জেলায় লণ্ডভণ্ড বাড়িঘর, আমের ব্যাপক ক্ষতি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০২৩
  • ৫৭ বার পঠিত

বিডি ঢাকা অনলাইন ডেস্ক

 

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট ও নাচোল উপজেলার ওপর দিয়ে গত রবিবার রাতে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট, বিদ্যুতের খুঁটি, গাছপালা, বোরো ধান ও আমসহ সবজি বাগান। প্রচুর পরিমাণে আম ঝড়ে পড়ে গেছে। ঝড়ে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কৃষি অফিসের হিসাব মতে, ১০ হাজার ২৭৫ জন কৃষকের বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ।
গোমস্তাপুর প্রতিনিধি : রবিবারের ঝড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার ঘরবাড়ি, দোকানপাট, বিদ্যুতের খুঁটি, গাছপালা, বোরো ধান ও আমসহ সবজি বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রাত পৌনে ৯টার পর কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিও হয়। প্রচ- ঝড়ে গোমস্তাপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন স্থান লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এতে বাড়িঘর, দোকানপাটের টিনের চালা উড়ে যায় এবং অনেক বাড়ি ভেঙে পড়ে। বোরো ধান, ভুট্টা, কলা, সবজিসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে অনেক আমবাগানের আম অর্ধেক পড়ে গেছে।
রাস্তার ধারে গাছপালা উপড়ে পড়ে। এতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনেক স্থানে বিদ্যুতের তারে গাছ পড়ে যায়। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঝড়ের পর থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে।
রহনপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, তার বাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। এতে বাড়ির আসবাবপত্রও ভেঙে গেছে।
পার্বতীপুর এলাকার বাসিন্দা জবদুল হক জানান, নিজস্ব ১০ বিঘার উপর জমিতে তার আমবাগান রয়েছে। কিন্তু রবিবারের রাতের ঝড়ে গাছের অর্ধেকের আম পড়ে গেছে। তবে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। অনেক স্বপ্ন ছিল আম নিয়ে।
রহনপুর পৌরসভার কাশিমপুর মহল্লার বাসিন্দা রুবেল, ডালিম, মাসির জানান, তাদের মহল্লার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বেশি বয়ে গেছে। মহল্লার অনেকের বাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। রাস্তার ধারে নিমগাছ, খেজুর গাছ, কলার বাগান, তালগাছ পড়ে গেছে।
এমরান আলী বাবু নামে আশ্রয়ন প্রকল্পের উপহারভোগী জানান, তার বাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে গেছে।
আহত ষাঁড়বুরুজ গ্রামের বাসিন্দা জামরুল ইসলাম জানান, ঝড়ের সময় তিনি খোয়াড় মোড়ের একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন। হঠাৎ একটি ইট উড়ে এসে মাথায় আঘাত করে। পরে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়ে। এতে আমসহ সবজি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার ৪ হাজার ২২০ হেক্টর জমির বিপরীতে ২১০ হেক্টর জমির আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা উৎপাদন ক্ষতির পরিমাণ ৫০৪ মেট্রিক টন।
গোমস্তাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হাবিবুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করলে পরবর্তীতে তাদের সহায়তা করা হবে।
ভোলাহাট প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় ঝড়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রবিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। ১৫-২০ মিনিটের ঝড়ে আম, কলা, ভুট্টাসহ কাঁচা-পাকা বাড়িঘড়, দোকানপাট ভেঙে ও টিনের ছাউনি উড়ে যায়।
এছাড়া গাছ ভেঙে রাস্তায় পড়লে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঝড় শেষে ভোলাহাট ফায়ার সার্ভিসের দল ঝড়ে পড়ে যাওয়া রাস্তার গাছ সরিয়ে ফেলে চলাচল স্বাভাবিক করে।
বিশেষ করে আমবাগানে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ঝরে পড়া আমগুলো ১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ভোলাহাট কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট ৩ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমির আমবাগানের মধ্যে ১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমির আমবাগান ঝড়ে আক্রান্ত হয়। এতে প্রায় ৪০ শতাংশ আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এছাড়া ভুট্টা প্রায় ১৮ লাখ, কলা প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভোলাহাট সদর, গোহালবাড়ী ও দলদলী ইউনিয়নের ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। দলদলী ইউনিয়নে পোল্লাডাঙ্গা নামটোলা গ্রামের মো. মহবুল হক, মোসা. রেহেনা খাতুন, ঘোনটোলা গ্রামের মো. জালাল, মোসা. সেতারা, উলাডাঙ্গা গ্রামের মো. কাদির ঝড়ে আহত হন।
আম ব্যবসায়ী মো. সেলিম রেজা বলেন, ঝড়ে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে আম ব্যবসায়ীরা হতাশায় আছি।
ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, ফাউন্ডেশন চত্বরে ১১০টি আড়ত ঘরের মধ্যে ৬০-৭০টি ঘরের টিন ও বেড়া উড়ে গেছে। এতে বহু টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মুনসুর আলী।
দলদলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক চুটু বলেন, আমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টনের টন আম ঝড়ে ঝরে পরেছে। এছাড়াও কাঁচাপাকা ঘর ভেঙে গেছে। আম ও বনজ গাছ উপড়ে পড়েছে। ঘরের টিন উড়ে লোকজন আহত হয়েছে।
গোহালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন আলী শাহ বলেন, আমার ইউনিয়নে ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাড়িঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে। শতবছর বয়সী বটগাছ উপড়ে গেছে। অনেক পাকা ঘরের ছাদ ফেটে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সুলতান আলী বলেন, ঝড়ে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ভুট্টা, কলার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তালিকা প্রক্রিয়া চলছে। তালিকা হাতে পেলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান মো. রাব্বুল হেসেন বলেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি লক্ষ করা গেছে।
এদিকে নাচোল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে বলে জানা গেছে। এছাড়াও জেলা সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com