বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে হেনস্তা পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে থানায় নেওয়া হলো

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৭ মে, ২০২১
  • ১৯৯ বার পঠিত

নিজস্ব সংবাদদাতা : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নথি সরানোর অভিযোগে সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখার পর প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বতর্মানে তাকে শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে সরকারি নথি সরানো ও ছবি তোলার অভিযোগ দায়ের করেছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব সিব্বির আহমেদ ওসমানী। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছিল।

প্রথম আলো সংবাদকক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তাকে সেখানে একটি কক্ষে ৫ ঘন্টা আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকেরা জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে সচিবালয় থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় তাকে বেশ অসুস্থ দেখাচ্ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই ভবনে যান সাংবাদিকেরা। সেখানে তাকে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কিছুই জানাননি। পরে বিকেলে সাংবাদিকেরা সচিবালয়ের বাইরে একত্রিত হয়ে রোজিনা ইসলামকে হয়রানি ও আটকে রাখার প্রতিবাদ জানান।

দু’জন নারী সদস্যের কাঁধে ভর করে তাকে সচিবালয় থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নেয়া হয়। সহকর্মীদের রোজিনা ইসলাম বলেন, ‘সচিবের সঙ্গে দেখা করার জন‌্য আমি পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে অপেক্ষা করছিলাম, এসময় তিনি নথিপত্র গায়েবের অভিযোগ তুলে আমার সঙ্গে দুর্ব‌্যবহার করেন। একপর্যায়ে একজন পুলিশ কনস্টেবল ডেকে আমার শরীরে হাত দেন। সাজানো অভিযোগে আমাকে আটকে রাখা হয়েছে। আমি কোনো নথিপত্র নিইনি।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, রোজিনা ইসলাম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অনন্য। আন্তর্জাতিকভাবে তার স্বীকৃতি আছে। এমন একজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা অন্যায়, অনভিপ্রেত। সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কি কারণে এভাবে আটকে রাখা হয়েছে, অসুস্থ হওয়ার পরও তাকে হাসপাতালে না নেওয়ার বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। রোজিনাকে হেনস্তা করার পেছনে দায়ীদের খুঁজে বের করতে হবে।

রোজিনা ইসলামকে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়েছে, এ বিষয়ে সচিবালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকেরা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু সচিবের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

পরে রাত ৯টার দিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান সাংবাদিকদের জানান, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সচিবের পিএসের রুমে ঢুকে মোবাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল-নথির ছবি তোলেন। আর কিছু কাগজপত্র তিনি সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন। একজন অতিরিক্ত সচিব, পুলিশের একজন সদস্য দেখে তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, এটা নিয়ে যেতে পারেন না। তখন পুলিশকে জানানোর পর মহিলা পুলিশ এসেছে। তার বিরুদ্ধে কিছু নথির ছবি তোলার অভিযোগ এনে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাকে থানায় নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়েছে।

রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে রোজিনাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, উনি সরকরি গোপন নথি সরাচ্ছিলেন। উনার দেহ তল্লাশি করে নথি পাওয়া গেছে।

রোজিনার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু বলেন, আমার স্ত্রী একজন সৎ সাংবাদিক। এর আগেও বহু দুর্নীতির রিপোর্ট করে তিনি রোষানলে পড়েছিলেন। আজকের ঘটনা তার প্রতিফলন।

প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রোজিনা ইসলাম এই মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশকিছু রিপোর্ট করছিলেন। যার মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির রিপোর্ট ছিল। আমরা মনে করছি এতে করে সে মন্ত্রণালয়ের আক্রোশের শিকার হয়ে থাকতে পারে।

রোজিনা ইসলামকে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে হেনস্তা করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী। তিনি অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে পুলিশ হেফাজত থেকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান।

শাহবাগ থানার সামনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা অবস্থান করছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com