বিডি ঢাকা ডেস্ক
দেশে সহজে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য লজিস্টিকস খাতের কোনো নীতিমালা নেই। ফলে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সময় লাগছে অনেক বেশি। এতে অর্থ ব্যয় ও ভোগান্তি বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য।
এই লোকসান থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তৈরি করছে জাতীয় লজিস্টিকস উন্নয়ন নীতি। এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে জাতীয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সক্ষমতা বৃদ্ধি, দক্ষ পণ্য পরিবহন ও সেবা নিশ্চিত করা যাবে।
পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে অর্থ ব্যয়, ভোগান্তি কমবেপ্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণের পরে বাংলাদেশের শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা হারানোর কথা রয়েছে। তাই শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা হারানোর আগেই ব্যবসা-বাণিজ্যে সক্ষতা অর্জনের জন্য সরকার এই নীতি দ্রুত কার্যকর করবে।
নতুন নীতি সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, গ্রাহকের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তার কাঙ্ক্ষিত পণ্য বা পরিষেবা প্রবাহের প্রারম্ভিক স্থল থেকে সর্বোত্তম পদ্ধতিতে, স্বল্পতম ব্যয়ে এবং সুনির্দিষ্ট সময়ে চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সম্পৃক্ত সব মাধ্যম ও কার্যক্রমের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা। এর মাধ্যমে বিশ্বমানের প্রযুক্তিভিত্তিক, সময়-ব্যয়সাশ্রয়ী, সুদক্ষ ও পরিবেশবান্ধব লজিস্টিকস ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। দেশীয়-আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি করে টেকসই ও অভীষ্ট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।
জানতে চাইলে দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালক সৈয়দ মো. বকতিয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকার একজন ক্রেতা বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের জন্য এলসি খোলার পর সেটি পৌঁছাতে ৯০ থেকে ১২০ দিন সময় লাগছে।
অনেক ক্ষেত্রে আরো বেশি সময় লাগে। অথচ চীন, ভিয়েতনাম, ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ প্রতিযোগী দেশগুলো এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে তাদের পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে। নৌ-স্থলবন্দর ও কাস্টমসের নানা জটিলতার কারণে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সময় বেশি লাগছে। এতে অর্থ ব্যয় বেশি হচ্ছে। তিনি বলেন, লজিস্টিকস নীতি বাস্তবায়ন হলে ব্যবসায়ীদের সময়, অর্থ ও হয়রানি কমবে।
এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে তদারকি করতে হবে। অনলাইনে দিতে হবে স্থল-নৌবন্দর এবং কাস্টমসের সব সেবা। বন্দর ও জেটিগুলোর দ্রুত আধুনিকায়ন করতে হবে।
সৈয়দ মো. বকতিয়ার বলেন, এই নীতিমালা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ব্যাঙ্ককের চেয়ে উন্নতি লাভ করবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, খসড়া নীতিতে পণ্যের লজিস্টিকস সব সেবা অনলাইনে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে নতুন এই নীতি কার্যকর হলে দেশি ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক ধরনের সুবিধা বাড়বে। কম সময়ে বন্দরের কনটেইনার ও কার্গো লোডিং-আনলোডিং করা যাবে। কাস্টমসে এইচএস কোডে হেডিং ও পণ্যের বর্ণনা সংক্রান্ত ভোগান্তি কমবে। বর্তমানে নানা অজুহাতে বন্দর ও কাস্টমসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এ ছাড়া এলডিসি-উত্তর সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সক্ষমতা ধরে রাখতে লজিস্টিকস খাতের ভূমিকা অনেক বেশি। ফলে এ নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য হলো, লজিস্টিকস সেবায় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে বিলম্ব ও ব্যয়ের ক্রমহ্রাস নিশ্চিত করা; বহুমাধ্যমভিত্তিক লজিস্টিকস অবকাঠামো গড়ে তোলা; ট্যাকিং ও ট্রেনিং, অটোমেটেড বা ডিজিটাইজড লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনা চালু করা; কাস্টমসসহ অন্যান্য পদ্ধতি সহজীকরণ; দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা; দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ; লজিস্টিকস পারফরম্যান্স সংক্রান্ত বিভিন্ন সূচকের ক্রমোন্নতি; সুরক্ষা, নিরাপত্তা, কমপ্লায়েন্স, অন্তর্ভুক্তিমূলক, জেন্ডার সংবেদনশীল ও পরিবেশবান্ধব নীতি কার্যকর; ফলপ্রসূ ও কার্যকর উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা গ্রহণ করা।
জাতীয় লজিস্টিকস উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (নির্বাহী সেল) শাহিদা সুলতানা কালের কণ্ঠকে বলেন, পণ্য আমদানি এবং রপ্তানির পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে যে খরচ সেটা কমানোর জন্যই এই নীতি বড় ভূমিকা রাখবে। পণ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটা হলো লজিস্টিকস সাপোর্ট। ফলে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ব্যয় কমানোর জন্য যে কাজ সেটাই এই নীতির মাধ্যমে করা হচ্ছে। এর আগে আমাদের দেশে এমন কোনো পলিসি ছিল না। এখন সরকারি-বেসরকারি সব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ও অংশীজনদের মতামত নিয়ে এটা তৈরি করা হচ্ছে।