
বিডি ঢাকা ডেস্ক
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক এমপি হারুনুর রশীদ বলেছেন, ফারাক্কা ব্যারেজ তৈরির পর সরকার এসেছে সরকার গেছে, ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন চুক্তি হয়েছে, কিন্তু ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করায় আমরা সমস্যার সমাধান করতে পারিনি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সার্ক গঠন করেছিলেন এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে একে অপরের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার লক্ষে। কিন্তু জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর সার্ক সেভাবে আর ভূমিকা রাখতে পারেনি। জিয়াউর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, ভারত পানি সমস্যার সমাধান চায় না। তাই তিনি পদ্মা ও যমুনার মোহনায় গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তার অকাল মৃত্যুর পর এই উদ্যোগ স্থগিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বেগম খালেদা জিয়া গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের আবারো উদ্যোগ নেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প একেনেকে পাস করেন। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এই প্রকল্পটি বাদ দিয়ে দেয়। ফলে প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি।
সোমবার বিকেলে জেলাশহরের আলীনগর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি আয়োজিত পদ্মা বাঁচাও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হারুন বলেন, যদি গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ করা হয় তাহলে উত্তর-দক্ষিণ অঞ্চলের ১৬টি নদী আবারো প্রাণ ফিরে পাবে। গঙ্গা ব্যারেজ হলে প্রায় ৫০ লাখ টন অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন হবে। জীববৈচিত্র্যের পরিবর্তন আসবে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে, বিপুল পরিমাণ মাছ উৎপান করতে পারব, আমাদের দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে পারব।
হারুনুর রশীদ বলেন— পদ্মা অববাহিকায় পানি না থাকায় আমাদের এই জেলার পানির স্তর নিচে নেমে গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পানিতে আর্সেনিক উঠে আসছে। তিনি বলেন— ২০০৬ সালে রাবারড্যাম তৈরির ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে আমি এই রাবারড্যাম তৈরি করেছি। এই রাবারড্যাম তৈরি করার ফলে ভোলাহাট পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটারজুড়ে মহানন্দায় পানি সংরক্ষণ করা যাচ্ছে। আমরা শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ নয়, গোটা বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির ব্যাবস্থা করব। আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের উন্নয়নের জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় গেলে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
‘চলো জি ভাই, হাঁরঘে পদ্মা বাঁচাই’— এই স্লোগানকে সামনে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গণসমাবেশ অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। সদর, শিবগঞ্জ, নাচোল ও ভোলাহাটে গণসমাবেশের পর সোমবার জেলা সদরে আবারো সমাবেশ করে দলটি।
সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন— চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন— জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ও সদর উপজেরা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তসিকুল ইসলাম তসি, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ময়েজ উদ্দিন, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ জনি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর কবির ও এনামুল হক, জেলা যুবদলের সভাপতি তবিউল ইসরাম তারিফ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মীম ফজলে আজিমসহ অন্যরা।
বক্তারা পদ্মা নদী বাঁচানোর দাবি তোলার পাশাপাশি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হানুরুর রশীদ জেলার উন্নয়নে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও তুলে ধরেন।
এদিকে আগামী ১৫ নভেম্বর নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে গণসমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি। ওই সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বলে সমাবেশ থেকে জানানো হয়।