বিডি ঢাকা অনলাইন ডেস্ক: নানা অভিযোগ পাওয়ার পর নগরীজুড়ে বিশেষ অভিযানে নামে রাজশাহী মহানগর পুলিশ। গত বছরের অক্টোবর মাসে নগরীর সব থানা কিশোর অপরাধীদের ধরতে পাড়া-মহল্লায় অভিযান চালায়। যাদের বিরুদ্ধে মাদকসংশ্লিষ্টতা বা বড় অপরাধের প্রমাণ মেলে তাদের পাঠানো হয় কারাগারে।
বিভিন্ন সময়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পর পুলিশের কাছে আটক হয় অনেক কিশোর। মুচলেকা দিয়ে যার বেশিরভাগই ছাড়া পেয়ে আবারও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কি না তা জানতে রাজশাহী মহানগরীর অন্তত ৫০০ কিশোরকে নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, এসব কিশোরের মধ্যে অনেকেই বড় ধরনের অপরাধ করে কারাগারে রয়েছে। কেউ বা ছাড়া পেয়েছে। তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করছে মহানগর পুলিশ।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, কিশোর গ্যাং নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এসব কিশোরের সম্পর্কে তথ্য পায় পুলিশ। তারা যাতে নতুন করে অপরাধে না জড়ায়, সেটি নিয়েই কাজ করা হচ্ছে।
গত বছরের শুরুর দিকে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে রাজশাহী মহানগরীতে কিশোর অপরাধের বিষয়টি। মহানগরীতে ভয়ংকর কিছু অপরাধে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় শিশু-কিশোরদের। ছোটোখাটো বখাটেপনা থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই এমনকি হত্যাকাণ্ডেও তারা জড়িয়ে পড়ে। মাদকের সঙ্গে জড়িয়েছে অনেকেই। অনেকের চলাফেরাও বেপরোয়া। অনেক পরিবারও তাদের সন্তান নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পুলিশকে জানায় নিজেদের সন্তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডের তথ্য।
এমন নানা অভিযোগ পাওয়ার পর নগরীজুড়ে বিশেষ অভিযানে নামে রাজশাহী মহানগর পুলিশ। গত বছরের অক্টোবর মাসে নগরীর সব থানা কিশোর অপরাধীদের ধরতে পাড়া-মহল্লায় অভিযান চালায়। যাদের বিরুদ্ধে মাদকসংশ্লিষ্টতা বা বড় অপরাধের প্রমাণ মেলে তাদের পাঠানো হয় কারাগারে।
কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা না পেলে বা ছোট অপরাধে জড়িতদের ছাড়া হয় মুচলেকা নিয়ে। অভিভাবকদের থানায় এনে সন্তানদের সম্পর্কে অবগত করা হয়। তাদের অপরাধের ধরন সম্পর্কে জানানো হয়। নিজেদের সন্তানদের ওপর নজর রাখতে অভিভাবকদের অনুরোধ জানায় পুলিশ।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, কিছু কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য পাড়া-মহল্লার প্রভাবশালী, মাস্তান বা বড় ভাইদের হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। তারা একসঙ্গে মাদক সেবন, নারীদের উত্ত্যক্ত করাসহ ছোট ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারি ও বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় খুন-ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটায় তারা। অনেকেই একটি চক্র তৈরি করে অপরাধে জড়ায়, আবার অনেকে গ্যাং ছাড়াও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে- এমন তথ্য পায় পুলিশ।
পুলিশের অনুসন্ধানে উঠে আসে তালিকাভুক্ত কিশোর অপরাধীদের মধ্যে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ৫০ শতাংশ, নিম্নবিত্ত ৪০ শতাংশ আর উচ্চবিত্ত ১০ শতাংশ রয়েছে। এদের ৫০ শতাংশই শিক্ষার্থী। যাদের বয়স ১৪ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। ৩৫ ভাগ কিশোর আগে লেখাপড়া করলেও এখন করে না। এসব কিশোরের মধ্যে ৩৫ ভাগ মাদকাসক্ত, ১০ ভাগ অনিয়মিত মাদক সেবনকারী। এরা প্রভাব বিস্তারের জন্য মারামারি, ছিনতাই, ইভ টিজিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, ‘২০২০ সালে আমি যখন রাজশাহীতে যোগদান করি তখন এখানকার সাংবাদিক ভাইয়েরা বলেছিল, রাজশাহীতে প্রচুর পরিমাণে সাইবার ক্রাইম হয়। এরপর এক সপ্তাহের মাথায় আমি সাইবার ক্রাইম ইউনিট করি। সাইবার ইউনিট করার পর আমি দেখলাম, আমাদের এখানে সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা। বিশেষ করে মেয়েরা।
‘এই পরিপ্রেক্ষিতে পাড়া-মহল্লায় আমরা দেখলাম কিশোররা ইভ টিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধ করছে। এরপরই আমরা কিশোর গ্যাংয়ের ডাটাবেজ তৈরি করলাম। প্রায় সাড়ে চার শ কিশোরকে আমরা ধরতে পারলাম।’
তিনি বলেন, ‘কিশোররা কী করে, কোথায় যায় সবকিছুই ডাটাবেজের মধ্যে করা হলো। প্রায় ৫০০ ছেলেমেয়েকে এই ডাটাবেজের আওতায় আনা হলো। পরে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হলো, তারা মুচলেকা দিয়ে ছেলেদের নিয়ে গেলেন। পুলিশের কাছে এখন পাড়া-মহল্লার বখাটেদের তালিকা রয়েছে। তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘আমরা শুধু মুচলেকা দিয়েই ছেড়ে দেইনি। তাদের পরিবারকে বলা হয়েছে নজর রাখতে। আমাদের প্রতিটি থানায় পুলিশ সদস্যরাও তাদের নজরে রাখছেন। তারা আবারও কোনো অপরাধে জড়িত হলে আমরা প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।