রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন

জাতীয় পরিচয়পত্রে তথ্য ভুল হলে যেভাবে সংশোধন করবেন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ১৪৮৭ বার পঠিত

বাংলাদেশে ২০০৮ সাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া শুরু হয়। নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় পরিচয়পত্র বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে বাংলাদেশে এখন প্রায় এগারো কোটি মানুষের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে।

কিন্তু প্রায়শই কার্ডে নানা ভুলের অভিযোগ পাওয়া যায়। যেমন ভুলের জন্য বাবার বয়স ছেলের চেয়ে দশ বছর কম হয়ে গেছে, মায়ের নামের জায়গায় বসে গেছে বাবার নাম।

ফেসবুকে জাতিয় পরিচয়পত্র বিষয়ক বেশ কটি গ্রুপ রয়েছে। সেখানে অনেকেই এসব বিষয়ে লিখছেন। অনেক সময় ব্যক্তি নিজেই হয়ত ভুলটা করেন অথবা সার্ভারে তথ্য যোগ করার সময়ও হয়ত ভুল হতে পারে।

কিন্তু তথ্যে একবার ভুল হয়ে গেলে অনেকরকম বিপাকে পড়তে হয়। অনেক সময় বাড়ির ঠিকানা বদল, বৈবাহিক অবস্থার পরিবর্তন ইত্যাদি নানা কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের দরকার পড়তে পারে।

ভুলের শিকার কয়েকজনের অভিজ্ঞতা
বিদেশ পড়তে যাওয়ার জন্যে ই-পাসপোর্ট করাতে গিয়েছিলেন মোঃ রাকিবুল ইসলাম। পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে জানতে পারলেন অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে।

রাকিবুল ইসলামের জাতীয় পরিচয়পত্রে একটা হ্রস্ব উ-কার বাদ পড়ায় বাবার নাম হয়ে গেছে ‘নরুল ইসলাম’। তার রক্তের গ্রুপও ভুল লেখা ছিল। অতএব পাসপোর্ট করতে দেবার আগে তাকে এনআইডি সংশোধন করতে হবে।

রাকিবুল ইসলাম বলছেন, “ওনারা যখন বাসায় এসে আমার তথ্য নেয় তখন বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখানো হয়েছিল। তাই আমার মনে হয় ভুলটা ওনারাই করেছেন।”

এমাসের শুরুর দিকে অনলাইনে বাবার নামের বানান সংশোধনের জন্য কাজ শুরু করলেন। নির্ধারিত ফি জমা ও যাবতীয় কাগজপত্র সেখানে আপলোড করার দশদিন পর মেসেজ পেলেন তার জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন হয়ে গেছে।

কিন্তু ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখলেন যে ভুল ছিল সেটাই রয়ে গেছে। হেল্প-লাইনে ফোন করে জানলেন জাতীয় পরিচয়পত্রের ওয়েবসাইটে ‘টেকনিকাল’ সমস্যা হয়েছে।

এই সপ্তাহে তথ্য সংশোধন হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাকিবুল ইসলাম।

ঢাকার বাসিন্দা পারিসা গিয়াস সম্প্রতি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে। সেসময় হঠাৎ খেয়াল করলেন এনআইডি কার্ডে তার বাবার নামের বানান ভুল রয়েছে।

দন্ত্য স বাদ পড়ায় গিয়াসউদ্দিন হয়ে গেছে ‘গিয়াউদ্দিন’। এরপর তিনি তার মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রেও ভুল খুঁজে পেলেন।

বাংলায় নামের বানান ঠিকই ছিল কিন্তু ইংরেজিতে নামটির বানান হয়েছে ‘দৌলতুনসা’। তিনিও অনলাইনে তথ্য সংশোধন করেছেন।

যেভাবে তথ্য সংশোধন করতে পারেন
ইতোমধ্যেই নিশ্চয়ই জেনে গেছেন এখন অনলাইনেই তথ্য সংশোধন করার সুযোগ রয়েছে। শুরুতেই এনআইডি পোর্টালে ঢুকে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।

সেখানে এনআইডি নম্বরটি দরকার হবে। অ্যাকাউন্টে ঢুকলে সেখানে লিংক পাবেন অনলাইনে অর্থ পরিশোধের। ওকে ওয়ালেট ও রকেটের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করা যায়। সোনালি ব্যাংকের মাধ্যমেও পরিশোধ করতে পারেন।

জাতীয় পরিচয়পত্রে যেসব তথ্য লেখা থাকে সেগুলোর যেকোনো একটি সংশোধন করতে চাইলে প্রথমবার আবেদনের জন্য ২০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩০০ টাকা এবং পরবর্তী যতবার আবেদন করবেন ৪০০ টাকা ফি দিতে হবে।

এছাড়া আরও কিছু তথ্য রয়েছে যেগুলো পরিচয়পত্রে লেখা থাকে না। সেগুলোও সংশোধন করা যায়। সেক্ষেত্রে প্রথমবার ১০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩০০ টাকা এবং পরবর্তীতে প্রতিবার ৩০০ টাকা ফি দিতে হবে। ফি পরিশোধ হয়ে গেলে এডিট করার লিংকে তথ্য চলে যাবে। এরপর আপনি তথ্য সংশোধন অপশনে যেতে পারবেন। সংশোধনের জন্য কিছু কাগজের কপি আপলোড করতে হবে। যা কারণভেদে ভিন্ন।

যেমন নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সনদপত্র, পাসপোর্টের কপি, ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য বিদ্যুৎ বা পানির বিলের কাগজ, বিয়ের পর স্বামীর নাম যোগ করতে চাইলে নিকাহনামা, স্বামীর জাতিয় পরিচয়পত্রে ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে, বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে স্বামীর নাম বাদ দিতে চাইলে তালাকনামা সংযুক্ত করতে হবে।

কোন ধরনের সংশোধনে কি কাগজ লাগবে সেটি ওয়েবসাইটেই দেয়া রয়েছে। তথ্য সংশোধন অনুমোদন হয়ে গেলে আপনি একটি মেসেজ পাবেন। ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজেই সংশোধিত এনআইডি প্রিন্ট করে লেমিনেট করে নিতে পারেন।

ইন্টারনেট না থাকলে যা করতে হবে
বাংলাদেশে সবার ইন্টারনেট ব্যাবহারের সামর্থ্য নেই। অথবা অনেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তাদের জন্য দেশের প্রতিটি উপজেলায় নির্বাচন অফিস রয়েছে।

সেখানে দুইজন করে ‘ডাটা এন্ট্রি অপারেটর’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।

“তারাই সবধরনের ডাটা এন্ট্রিতে সহযোগিতা করবেন। তাদের সেভাবে বলা আছে। এটা পুরোটাই বিনামূল্যে করবেন তারা। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়ন কাউন্সিলে যে ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে সেখানেও যাতে নাগরিকেরা অনলাইনে এনআইডি সংক্রান্ত সেবা পান সেই পরিকল্পনা করছি আমরা।”

কিন্তু ভুল কমানোর জন্য কি করা হচ্ছে?
এই প্রশ্নের জবাবে সাইদুল ইসলাম বলেন, যখন প্রথম এনআইডি বিতরণ শুরু হয়েছিল, একদম নতুন একটা কাজ, সেসময় বেশ কিছু ভুল হয়েছিল।

কিন্তু এখন ভুলের সংখ্যা অনেক কম বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলছেন, কয়েক ধাপে তথ্য যাচাই হয়।

“জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদনকারী নিজে ফর্ম পূরণ করেন, সেই তথ্য সার্ভারে তোলেন একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, এরপর একজন প্রুফ রিডার সেটা যাচাই করেন এবং তারপর সেসব তথ্য সার্ভারে আপলোড করা হয়। আবেদনকারীকে যখন ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি দিতে আসবেন সেসময় তাকে একটি প্রিন্ট আউট দেয়া হয় তথ্য যাচাই করার জন্য। সেই কপিতেও সই করেন তিনি। এই কারণে ভুলের সংখ্যা খুবই কম।”

এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রের ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে সকল তথ্য ও কাগজ সংযুক্ত করে নতুন এনআইডি কার্ড নিজেই এখন ঘরে বসে করা সম্ভব বলে তিনি জানিয়েছেন।সূত্র:বিবিসি বাংলা

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com