রাজশাহী সংবাদদাতা : ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আর রাজশাহীতে ৫৪ জন।
এই দুই জেলার আক্রান্তদের বেশিরভাগ চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মঙ্গলবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৫৪ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৮৬ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এবং ৪৮ জন রাজশাহীর। এদের মধ্যে ১৪ জন আইসিইউতে রয়েছেন। যাদের বেশীরভাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের। সেখানকার রোগিদের শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।
তিনি জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজন করোনা আক্রান্ত রোগির মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে দুইজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের, একজন রাজশাহীর ও একজন পাবনার। এ নিয়ে গত তিনদিনে এই হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। আর গত ১ মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ও ১১২ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, করোনার প্রথম ধাপে হাসপাতালে সর্বোচ্চ রোগি ছিল ৯৬ জন। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ রোগি বেড়ে দাড়ায় ১৩৬ জনে। ঈদের আগে সেটি কমে এসেছিল ৭১ জনে। কিন্তু ঈদের পর থেকে করোনা রোগি বাড়তে থাকে। যা একদিনে ১৬৮ জনে দাঁড়ায়। তবে রোগিদের বেশীর ভাগই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা।
তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্তের হার ৫৫ ভাগ। তবে কম নয় রাজশাহীতেও। বর্তমানে রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৪৫ ভাগ। করোনা আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসায় হাসপাতালে আরও একটি ওয়ার্ড বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে পাঁচটি ওয়ার্ডে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও আরও একটি ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাতদিনব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। লকডাউনের জন্য সাতদিন আগেই আমরা সুপারিশ করেছিলাম।
রাজশাহীতেও লকডাউন প্রয়োজন বলে উল্লেখ্য করে শামীম ইয়াজদানী বলেন, এখানে বর্তমানে লকডাউন দেয়া না গেলেও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নয়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
কারণ যে হারে হাসপাতালে রোগি ভর্তি হচ্ছে এ ভাবে চলতে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ক্যাপাসিটির বাইরে চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে সদর হাসপাতাল চালুর জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। যেহেতু সেখানে অক্সিজেন লাইন নেয় সেক্ষেতে সেখানে সাধারণ রোগিগুলো রাখার ব্যবস্থা করা যাবে।
তিনি বলেন, রাজশাহীর রোগিদের চেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগিদের অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে। ফলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ভারতীয় ধরন আছে কি না তা পরীক্ষা করতে ৪৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরএ পাঠানো হয়েছে। তবে ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি। তাদের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেলে এ বিষয়ে পরিবর্তি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাউয়ুম তালুকদার বলেন, রাজশাহীর সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোন মানুষ রাজশাহী আসবে না। রাজশাহীর কেউ চাঁপাইনবাবগঞ্জে যেতে পারবে না।
এছাড়াও করোনার সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রতিটি উপজেলাতে মাইকিং করে প্রচার চালানো হচ্ছে। এর পরও যদি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসে তখন পরবর্তি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি বলেন, রাজশাহী সদর হাসপাতাল এখন বন্ধ রয়েছে। সেটি চালু করে করোনা ইউনিট করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।